সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কী অপরাধ করেছেন জানেন না হাবিব, শেষ হয় না নির্যাতন

ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান হাবিব। ছবি : সংগৃহীত
ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান হাবিব। ছবি : সংগৃহীত

দলীয় কোনো পদ পদবি নেই। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ শাসনামলে সরকারের চার রাজনৈতিক মামলার আসামি তিনি। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে নাশকতা মামলায় কারাগারে কাটিয়েছেন ৪৩ দিন। কখনো আখ্যা পেয়েছেন জামায়াত নেতা, কখনো পেয়েছেন বিএনপি নেতার আখ্যা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মামলার আসামি হয়ে ছিলেন আত্মগোপনে।

নতুন সরকারের আমলে ভেবেছিলেন এই বুঝি মিলল স্বস্তি! কিন্তু রেহাই মেলেনি। এবার তাকে আওয়ামী লীগের নেতা আখ্যা দিয়ে করা হচ্ছে নানাভাবে হয়রানি। ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম হাবিবুর রহমান হাবিব। ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের টাট্টিবাড়ি সোসাইটি এলাকার বাসিন্দা তিনি।

সম্প্রতি হাবিবুর রহমান হাবিব আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগের নেতা এমন আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। যেখানে তাকে পদধারী নেতা হিসেবে দাবি করা হয়। তবে শ্রমিক লীগের কমিটির তালিকায় হাবিবের নাম পাওয়া যায়নি। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি টয়লেট্রিজ প্রতিষ্ঠানের ডিলার শিপ নিয়ে ব্যবসা করেন হাবিব। করেন জমি কেনাবেচারও ব্যবসা। ব্যবসায়িক উন্নতিতে ঈর্ষান্বিতরাই এমন প্রচারণার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছে তার পরিবার।

সম্প্রতি টাট্টিবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুইটি বাড়ি, একটি গোডাউন নিয়েই তার সম্পত্তি। ১৯৮৩ সাল থেকে এলাকাটিতে বাস তাদের। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিজমা ও ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত তিনি। এলাকাজুড়ে রয়েছে সুনাম।

এলাকাটিতে গিয়ে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। আব্দুর রহমান নামে ষাটোর্ধ ব্যক্তি বলেন, তাকে তো বহু বছর ধরেই দেখছি। কোনো দিন ব্যবসা বাণিজ্যের বাইরে কিছু করতে দেখিনি। লোক হিসেবেও তো ভালোই জানি। রাজনীতি তো করতে দেখিনি।

আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে হাবিবুরের একটি ছবি দেখানো হয় এই ব্যক্তিকে। তিনি বলেন, ‘এলাকায় আসছে, অনেকেই ছবি তুলছে। তাই কি সে নেতা নাকি?’

একই কথা বললেন ইউসুফ খান নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা। তার দাবি, হাবিবুর কোনোদিনই কোনো রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন না। তবে স্থানীয় অনেকেই তার উন্নতি নিয়ে খুশি না। এজন্য হয়তো এমন কিছু বলতে পারে। সে তো আওয়ামী লীগ আমলেও অনেক হয়রানি হয়েছে। এখনো হলে সেটা তো অবিচার।

তথ্য বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের পক্ষে থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় গত ২৬ জুলাই। ওই মামলায় ১ নম্বর আসামি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এ ছাড়া ২০১৮ সালে ও তার আগে ২০১৭ সালেও একইভাবে পুলিশ বাদী হয়ে করা নাশকতা মামলায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আসামি ছিলেন হাবিবুর রহমান। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর হওয়া মামলায় ৪৩ দিন কারাভোগ করেন তিনি। আর ২০১৮ সালের নাশকতার মামলায় কারাভোগ করেন দুই দিন।

এদিকে সম্প্রতি সরকার পতনের পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। এরপর টাট্টিবাড়ি আশুলিয়া সোসাইটির কমিটিতে পরিবর্তন আসে। সেখানে ভূমিকা রাখেন হাবিবুর রহমান। নিয়ন্ত্রণ হারানোয় স্থানীয় একটি গ্রুপ হাবিবুরের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করা হয়। আর এজন্য তাকে আওয়ামী লীগ হিসেবে চিহ্নিত করে নানা উপায়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে লেখা হয়, হাবিবুর রহমান হাবিব আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি। এর সঙ্গে ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল হওয়া কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে পাঁচ নম্বর নামটি হাবিবুর রহমান।

পোস্টে এটি আশুলিয়া কমিটি লেখা হয়েছে। কমিটির সভাপতিসহ আরও পাঁচ নেতাকে ফোন করলে তারা কেউই হাবিবুর রহমান হাবিবকে চেনেন না বলে জানান।

আগেও ২০২০ সালের মার্চে ভারতে থাকাকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে জমি দখল করেছে জানিয়ে মানববন্ধন করে আদালতে মামলা করে। তবে মামলার যে সময় উল্লেখ করা হয় সেই সময় হাবিবুর রহমান চিকিৎসার জন্য ছিলেন ভারতে। পাসপোর্টের কপি আদালতে দেখিয়ে সেবার মামলা থেকে রক্ষা পান তিনি।

এসব বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ব্যবসায়ী। নিজে পরিশ্রম করে চলি। এলাকায় কোনো দিন কোনো অন্যায় কাজ করিনি। কিন্তু ব্যবসায়িক বিরোধের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমাকে বানানো হতো বিএনপি, নাশকতা মামলা দেওয়া হয়েছে সে সময়। আর এখন আমাকে ভুয়া তালিকা দিয়ে বানানো হচ্ছে শ্রমিক লীগের নেতা। রাজনৈতিক রোষানলে আমার জীবন বিপর্যস্ত। আমি ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমি সরকারের কাছে, আইনের কাছে এই হয়রানি থেকে মুক্তির জন্য আশ্রয় চাই।

হাবিবুরের ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমার বাবা পরিশ্রম করে আয় করেন। কিন্তু স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে নানা ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। এর সঙ্গে জড়িত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গীরা। মূলত আওয়ামী লীগ দেখিয়ে প্রচার চালিয়ে তাকে হত্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা চলছে। আমরা প্রশাসন ও সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই।

কারো বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মামলায় জড়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান ব্যক্ত করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাবি শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, একটা নিরপরাধ মানুষ যেন মামলার শিকার না হন। পুলিশ প্রশাসন সবকিছু তদন্ত করে দেখে মামলা গ্রহণ করবেন। কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন। কাউকে ট্যাগ দিয়ে হয়রানির কোনো সুযোগ নেই। আমরা কেউ যেন মিথ্যা মামলার শিকার না হন সে বিষয়ে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছি।

আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, নিরপরাধ কাউকে মামলায় জড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যদি কাউকে জড়ানো হয়ও তাকে হয়রানির কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত সাপেক্ষেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রেমিককে আটকে রেখে প্রেমিকাকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’

ভারতীয় সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন ড. ইউনূস

ড. ইউনূস-বাইডেন বৈঠক, নতুন উচ্চতায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক

তেলের ড্রাম বিস্ফোরণে যুবকের মৃত্যু

মধ্যপ্রাচ্যে সেনা পাঠানোর ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

‘নতুন অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা জানে না সরকার’

মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, গ্রেপ্তার ২৮

বাইডেনকে যে উপহার দিলেন ড. ইউনূস

আবু আসাদকে পাসপোর্টের অতি. ডিজি পদে পুনর্বহাল 

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন / আবু সাঈদের শরীরে গুলির চিহ্ন ও মাথায় গর্ত

১০

‘প্লাস্টিক-পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে নগরীর জলাবদ্ধতা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’

১১

খুলনায় দুই মামলায় গোলাম পরওয়ারসহ ৪৯ জন খালাস

১২

ড. ইউনূস-বাইডেন বৈঠক, হলো যেসব আলোচনা

১৩

বাংলা একাডেমির বানানরীতি পাল্টানোর দাবি কবিতা পরিষদের

১৪

আদালতের হাজতখানা থেকে পালাল রিমান্ডের আসামি

১৫

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী মারা গেছেন

১৬

শিক্ষায় বৈষম্যদূরীকরণে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি

১৭

সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার বিচার চায় খেলাফত মজলিস

১৮

মামলা না নেওয়ার অভিযোগে বাড্ডা থানার সামনে মিছিল

১৯

‘মেরে হলেও ভাড়া নিব’ চবি শিক্ষার্থীকে বাসের হেলপার

২০
X