সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ৫ নম্বর বড়দল ইউনিয়নের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা দেবব্রত কুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে ভিজিডির ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এজেন্ট দেবব্রতসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, বড়দল ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডধারী ৩৭৮ দুস্থ ও অসহায় নারী প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পেয়ে থাকেন। এ চাল নেওয়ার সময় ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট দেবব্রত কুমার মণ্ডলের কাছে ২২০ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখেন তারা। নিয়ম অনুযায়ী এ টাকা তাদের নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে জমা রাখার কথা থাকলেও তা জমা করেননি দেবব্রত। নিম্ন আয়ের অসহায় কার্ডধারীদের নামে অ্যাকাউন্ট না করে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ১৯ মাসে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভিজিডি কার্ডধারী গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী রেহানা খাতুন বলেন, প্রতি মাসে চাল নেওয়ার সময় গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে এশিয়া ব্যাংকে টাকা জমা রাখতাম। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সব কাগজপত্র জমাও নিয়েছে কিন্তু আমাদের অ্যাকাউন্টে এ পর্যন্ত কোনো টাকা আসেনি।
ভিজিটিং কার্ডধারী আকলিমা খাতুন বলেন, প্রতি মাসে আমরা কষ্ট করে ২২০ টাকা করে টাকা জমা দেই, কিন্তু আমাদের মোবাইলে টাকা জমার কোনো মেসেজ আসে না। আমরা বললে তারা বলে একবারে টাকা পাবেন, কোনো মেসেজ আসবে না।
এ বিষয়ে হারুন-অর রশিদ, আকবার হোসেন, জিনারুল ইসলামসহ একাধিক গ্রাম পুলিশ বলেন, প্রতি মাসে আমরা চাল বিতরণ শেষে সব টাকা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ও বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা দেবব্রতের কাছে জমা দিয়ে থাকি। তিনি এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয় জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ও বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা দেবব্রত কুমার মণ্ডল বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গ্রাম পুলিশরা চেয়ারম্যানের সেক্রেটারি রহিমের কাছে টাকা দিত। আমি হলাম ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট। এ সময় গ্রাম পুলিশ সদস্যরা দেবব্রতের মুখোমুখি হয়ে টাকা তার কাছে দিয়েছে বললে দেবব্রত সুর পাল্টে ভিন্ন কথা বলতে থাকেন এবং বিষয়টি এড়িয়ে যান।
একপর্যায়ে ব্যাংক এশিয়ার ভিজিডি সঞ্চয়ের লেনদেনে তার স্বাক্ষরিত ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮০ টাকার একটি স্টেটমেন্ট তাকে দেখালে তিনি সেটা অস্বীকার করে বলেন, এটা আমার স্বাক্ষর না, এটা তৈরি করা হয়েছে। তাহলে অসহায় মানুষের এই ১৫ লাখ টাকা গেল কোথায়? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) জয়দেব কুমার মল্লিক বলেন, ভিজিডির ডিও হয় চেয়ারম্যানের নামে। তিনি গোডাউন থেকে মাল উত্তোলন করে নিজ নিজ ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। কার্ডধারীদের সঞ্চয়ের টাকা গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ব্যাংক এশিয়া দেবব্রতের কাছে জমা দেয়। টাকা ব্যাংক এশিয়াতে জমা হয় এটুকু জানি। এ ছাড়া এ বিষয়ে আমি অবগত নই।
বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ চন্দ্র সানার বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার পরিষদে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণা রায় কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে শুনেছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন