সৈনিক থেকে শিল্পপতি বনে যাওয়া মেহেরপুরের হাবিবুর রহমান ওরফে (হাবাল) একাধিক প্রতারণা মামলার সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি। এর আগে দৈনিক কালবেলায় ‘সৈনিক থেকে শিল্পপতি হাবিবুর রহমান’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে নানা তথ্য।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আলোচিত হন। ২০০০ সালেও তার পরিবার হতদরিদ্র ছিল। হঠাৎ করে হাবিবের এ উত্থান হয়েছে। এখন নিজেকে শিল্পপতি বলে পরিচয় দেন। দুটি মামলার সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি হয়েও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে- মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান সদর থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলেন।
এক বছরেরও অধিক সময় ধরে হাবিবুর রহমান দুটি প্রতারণা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। এ ছাড়া হাবিবের বিরুদ্ধে আরও তিনটি প্রতারণা মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে। বিচারাধীন তিনটি মামলার মধ্যে একটি প্রতারণা ও মারধরের জিআর মামলা। সব মামলাতেই চার্জশিটভুক্ত আসামি হাবিব। মেহেরপুর সদর থানাতে দুটি সাজা ওয়ারেন্ট পড়ে থাকলেও হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এর মধ্যে একটি ঢাকার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-৬ আদালতের সিআর ১৬৪৮/১৩ মামলার সাজার ওয়ারেন্ট। ২৩ সালের ৩ মার্চ তারিখে মেহেরপুর সদর থানায় রেজিস্ট্রিকৃত এ সাজা ওয়ারেন্ট গ্রহণ করে।
অপর ওয়ারেন্টের বিষয়ে জানতে কালবেলার পক্ষ থেকে মেহেরপুর সদর থানায় যোগাযোগ করা হলে ওসি সেখ কনি মিয়া তথ্য ও বক্তব্য দেবেন বলে কালবেলা প্রতিনিধিকে দীর্ঘক্ষণ থানায় বসিয়ে রেখে বক্তব্য না দিয়েই কৌশলে বের হয়ে যান। এরপর তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
হঠাৎ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া হাবিব মেহেরপুর শহরের প্রবেশপথেই স্থাপন করেছেন একটি অটোরাইস মিল, কাজ চলছে হাবিব পেট্রোলিয়াম এবং হাবিব করপোরেশন নামে একটি ১২ তলা ভবনের। ১০ টাকায় তাঁতের গামছা বিক্রি করা পরিবারের এই হাবিবের হঠাৎ করে উত্থানে বিস্মিত এলাকাবাসী। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে একাধিক ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকারও বেশি লোন করে বিদেশে পাচার করেছেন হাবিব।
মেহেরপুর বড়বাজারের গামছা ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম মিয়া কালবেলাকে বলেন, আমি ৩৭ বছর যাবত এখানেই গামছার ব্যবসা করছি। হাবিবের বাবা পিরোজপুর গ্রামের আজিম উদ্দিন আমার সঙ্গে গামছার ব্যবসা করতেন। তিনি বাড়িতে সুতা, রং এবং তাঁত নিয়ে কাজ করতেন, এটা সবাই জানে। হাবিব কি করে এত টাকার মালিক হলো সেটা আমি জানি না। এ বিষয়ে আমার কথা বলাও ঠিক হবে না। তবে আমি তার বাবাকে চিনি।
কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, হাবিব বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে চাল তৈরি করে বিক্রি করেন। পরে সেই ধানের মূল্য চাইতে গেলে উল্টো ধান মালিকদের নামেই মামলা করে বসেন। কিছুদিন আগে নিউজ করতে গেলে প্রথম আলোর মেহেরপুর প্রতিনিধি আবু সাঈদকে হুমকি দেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটাক্ষ করে পোস্ট দেন।
দৈনিক সকালের আলো পত্রিকার মেহেরপুর প্রতিনিধি আতাউর রহমান কালবেলাকে বলেন, মেহেরপুরের মানুষ হাবিবুর রহমান বিভিন্ন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকটি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে হাবিব চাল তৈরি করে এবং বাজারে বিক্রি করে। কিন্তু ধানের মালিকদের অর্থ পরিশোধ করে না। মেহেরপুর শহরের বেশ কয়েকটি জেলার ধান ব্যবসায়ীদের অভিযোগ নিয়ে আমি একটি প্রতিবেদন করায় আমাকেও মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।
আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং মেহেরপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল আশরাফ রাজিব কালবেলাকে বলেন, হাবিব একসময় আমার বাড়ির কাছের মসজিদের সামনে একটি ছাত্রাবাসে থাকত। সেই থেকে পরিচয়। দুই বছর আগে আমার দোকান থেকে তার চালের মিলের কাজের জন্য নিয়মিত সিমেন্ট কিনে নিয়ে যেত। লেনদেনের একপর্যায়ে ২ লাখ ৭ হাজার টাকা বকেয়া হয়। বারবার চাওয়ার পরও সে আমার টাকা পরিশোধ করেনি।
উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসভবনে কাজ করতেন তিনি। রাষ্ট্রপতির নাম ভাঙিয়ে হাবিব বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিয়োগ-বাণিজ্য শুরু করেন। এতে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক বনে যান। বিগত দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিতে ব্যাপক প্রচারণা চালান।
মন্তব্য করুন