রাঙামাটির সাজেকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউপিডিএফ সমর্থিত অবরোধের কারণে শনিবার থেকে আটকা আছে প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। অবরোধের কারণে সাজেকে যেতে পারছে না জ্বালানি তেল, যার কারণে পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট।
শুক্রবার সকালে সাজেক যায় বেশ কিছু পর্যটক। শনিবার ফেরার কথা থাকলেও তারা ইউপিডিএফ সকাল ৬টা থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের কারণে ফিরতে পারছেন না। এসব পর্যটকের মধ্যে নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী পর্যটক রয়েছে। যাদের কেউ কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত, তারাও ফিরতে পারছেন না। আবার অনেক চাকরিজীবী রয়েছেন, যারা সাপ্তাহিক ছুটিতে বেড়াতে এলেও ফিরতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
সাজেক কটেজ মালিকদের সূত্রে জানা যায়, সাজেকে প্রায় দেড় হাজার পর্যটক ও ১৭৮টি পর্যটকবাহী গাড়ি শনিবার থেকে আটকা পড়ে আছে। সাজেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে। জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও, অবরোধের কারণে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে। এতে অনেক কটেজে জেনারেটর সুবিধাও বন্ধ হয়ে পড়ছে। আবার জ্বালানি তেল না থাকায় পানি সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়াও সাজেকে তিন শতাধিক কটেজ ও রেস্টুরেন্টে মালিক-কর্মচারী আরও প্রায় দেড় হাজার মানুষ অবস্থান করেন সবসময়। সাজেকে পর্যটক ও ব্যবসায়ী মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার পর্যটকের খাবার সেখানে মজুদ না থাকায়, খাবার, জ্বালানি তেল, জ্বালানি গ্যাস সংকটে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে সাজেকে অবস্থান করা পর্যটকদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
সাজেক অবকাশ কটেজের স্বত্বাধিকারী বিজয় ঘোষ জানান, সাজেকে অবরোধের কারণে আমাদের কটেজেই ৬৫ জনসহ প্রায় দেড় হাজার পর্যটক আটকা পড়ে আছেন শনিবার থেকে। সেখানে বিদ্যুৎ নেই বৃহস্পতিবার থেকে। জেনারেটর দিয়ে পর্যটকদের সেবা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি তেলের সংকটে সে সেবাও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে গরমে শিশুরা কষ্ট পাচ্ছে। অনেক অসুস্থ রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
তিনি আরও জানান, সেখানে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ সেখানে অগ্রিম খাবার মজুদ রাখা হয় না। খাবার নিয়ে যেতে হয় ৪০কিলোমিটার দূরে বাঘাইহাট থেকে। কিন্তু অবরোধের কারণে তা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে সাজেকে মনটানা রেস্টুরেন্ট গতকাল থেকে বন্ধ রয়েছে খাবার না থাকায়। আমাদের কটেজের লোকজনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছি। একটি রেস্টুরেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি- তারা দুপুরে শুধু ডাল-ভাত খাওয়াতে পারবে। সেখানে জ্বালানি তেল পাঠানো গেলে সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে বলে আশা করছি।
সাজেক নিরিবিলি কটেজের মালিক মো. ফয়সাল আহমেদ জানান, সাজেকে প্রচুর পর্যটক আটকা আছে। সেখানে অবরোধের কারণে তেল নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় পানিসহ বেশ কিছু সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যটকদের আজকের মধ্যে ফিরানো না গেলে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে।
ছাউনি কটেজের মালিক মো. ইমনারুল আলম জানান, সাজেকে পর্যটক আটকা আছে। তাদের ফিরিয়ে আনা জরুরি। পর্যটকরা সেখানে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
পর্যটক আল আমিন জানান, এখানে খাবার সংকট, পানি সংকট- আমরা খুব কষ্টে আছি। আমাদের যতদ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। আমরা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাসায় যেতে চাই।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, সাজেকে আটকে পড়া পর্যটকদের বিভিন্ন সংকটের বিষয়টি আমরা জেনেছি। বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলছি। আজ বিকেলের মধ্যে পর্যটকদের সাজেক থেকে ফেরানোর ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
মন্তব্য করুন