গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় একটি খাদ্য উৎপাদন কারখানায় বিক্ষোভের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৩ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানা এলাকায় বিক্ষোভের সময় তাদের আটক করা হয়।
এর আগে সোমবার সকালে শ্রমিকরা ১২দফা জানিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান নেয়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টঙ্গী ও বাঘের বাজার এলাকায় তিনটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ সময় কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক কিছু সময় অবরোধ করে রাখে। এতে যানজটে নাকাল অবস্থায় যাত্রীরা।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা হাজিরা বোনাস বাৎসরিক ছুটিসহ ১২ দফা দাবিতে ঘটনা নিয়ে অসন্তোষের জেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু বন্ধ ঘোষণার পরও আজ সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান করে। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কারখানা বন্ধ থাকার পরও কারখানার ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এদিকে, তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গীর পশ্চিম থানার খাঁ পাড়া এলাকায় অবস্থিত সিজন ড্রেসেস লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সকাল ৭টায় কারখানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষজন। গাড়ি না হেঁটেই অনেকেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সড়ক অবরোধ করা গার্মেন্টস শ্রমিকরা বলেন, তিন মাস ধরে গার্মেন্টসের মালিকপক্ষ বেতন দিচ্ছে না। বাকি রয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ওভারটাইমের টাকা, তিন বছরের ছুটির টাকাও। বারবার আশ্বাস দিয়েও তারা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেককেই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
এদিকে, সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেনরিফিউ গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ১২ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।
জানা যায়, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ ৮টি দাবি মেনে নেয়। ১২টি দাবি থেকে ৮টি দাবি মেনে নিলেও বাকি চারটি দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে। এতে সকাল থেকেই মহাসড়কের ওই অংশের আশপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজটের তৈরি হয়েছে। মহাসড়কে চলাচলকারী দুরপাল্লার বাসসহ ব্যক্তিগত যান আঞ্চলিক সড়ক হয়ে চলাচল করছে। পরে দাবি মানার আশ্বাস পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যায়।
গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বাঘের বাজার জোনের পরিদর্শক সুমন মিয়া কালবেলাকে জানান, সকাল থেকে শ্রমিকরা মহাসড়কে আন্দোলন করছেন। এতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য শ্রমিকদের বলা হয়েছে।
শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন