এক যুগেও শেষ হয়নি বরিশাল সিটি সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ। দফায় দফায় নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।
ফলে দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করেও ফের ব্যবসা শুরু করতে না পেরে নিঃস্ব হয়েছেন পুরোনো মার্কেটের ১৫ ব্যবসায়ী। অন্যদিকে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই ভবনের এক একটি স্টলের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময়ে নগরবাসীর জন্য ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট ফকিরবাড়ী রোডের মুখে অবস্থিত পুরোনো মার্কেট ভেঙে অত্যাধুনিক সিটি সুপার মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সাততলা বিশিষ্ট এ মার্কেটের নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নুশরাত বিল্ডার্স।
প্ল্যান অনুযায়ী প্রতি ফ্লোরে ১৯টি করে মোট ১৩৩টি স্টল নির্মাণের কথা ছিল। প্রথমে এ মার্কেটের নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৫ টাকা। ৭৩০ দিনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের ১৪ মে আরও ৫ কোটি ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৪৯ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। পরে নানা জটিলতায় চারতলা নির্মাণ করে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
তবে মার্কেটের নির্মাণকাজ শেষ করতে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সময়ে দরপত্র আহ্বান করেন। ২০২২ সালের ২৮ জুন ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪২ হাজার ৬২ টাকা বৃদ্ধি করে নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর পরও শেষ করা যায়নি ভবনটির নির্মাণকাজ। ২০২৩ সালে ফের ৩ কোটি ৩২ লাখ ২৯ হাজার ১৮ টাকা বাড়িয়ে রিটেন্ডার আহ্বান করা হয়। সর্বমোট ৩২ কোটি ৭৩ লাখ ১১ হাজার ৯৯৪ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু এর পরও ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।
এদিকে চারবারে প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই ভবনটি এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। যে কারণে ব্যবসায়ীরা এই মার্কেটে দোকান বা স্টল নিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। জানা গেছে সাততলা বিশিষ্ট সিটি সুপার মার্কেটের প্রতি তলায় ৫ হাজার ৮৭৬ বর্গফুট জায়গা রয়েছে।
সেই হিসাবে সাততলায় মোট ৪১ হাজার ১৩২ বর্গফুট জায়গা রয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা হলে প্রতি বর্গফুট জায়গার মূল্য দাঁড়ায় ৭ হাজার ৯৫৭ টাকা। এ ছাড়া এই টাকার সঙ্গে যুক্ত হবে স্টোর ভাড়া। ফলে এত টাকা দিয়ে স্টল বরাদ্দ নেওয়ার আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের।
বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, মার্কেট ভবনটি যে অবস্থায় রয়েছে সেভাবেই সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ স্টল বরাদ্দ হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন। এমনকি সিটি সুপার মার্কেটের সামনে সাইনবোর্ডের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে অবহিত করা হয়েছিল। তবে স্টলের মূল্য অতিরিক্ত হওয়ায় বরাদ্দের আবেদনপত্র জমা পড়েনি। অন্যদিকে পুরোনো ভবনের ব্যবসায়ী খন্দকার মাহবুব বলেন, এক যুগ ধরে সিটি সুপার মার্কেটে একটি স্টল পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। কবে যে নির্মাণকাজ শেষ হবে, তা কেউ বলতে পারেন না। ওই পুরোনো ভবনের প্রায় ১৫ জন ব্যবসায়ী আজ নিঃস্ব। সিটি সুপার মার্কেটে স্টল না পেয়ে প্যাসিফিক সার্ভিস সেন্টারের স্বত্বাধিকারী নান্টু নিজের বসতবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। একইভাবে নিঃস্ব হয়েছেন সোবাহান হোমিও হলের মোসাদ্দেক আলী, মলি ট্রেডার্সের মো. ফারুক হোসেনসহ ১৫ ব্যবসায়ী।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী আবুল বাশার বলেন, সর্বশেষ দরপত্রের কাজ শেষ হয়নি। বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
মন্তব্য করুন