মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান ওরফে (হাবাল)। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আলোচিত হন। ২০০০ সালেও তার পরিবার হতদরিদ্র ছিল। হঠাৎ করে হাবিবের এ উত্থান হয়েছে। এখন নিজেকে শিল্পপতি বলে পরিচয় দেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে হাবিবের বাপ, দাদা, মা, দাদি মাত্র ১০ টাকার তাঁতের গামছা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ সময় হাবিব সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকরি পান। চাকরি পাওয়ার পর থেকে তার সংসারে মোটামুটি সচ্ছলতা আসতে শুরু করে।
হাবিবের বন্ধু মালেক মিয়া বলেন, সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসভবনে কাজ করার সুযোগ পান হাবাল। আবদুল হামিদের বিভিন্ন ফরমায়েশ শুনতেন তিনি। বাসার বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় পরিষ্কার ও হাটবাজার করে দিতেন তিনি। রাষ্ট্রপতির নাম ভাঙিয়ে হাবিব বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। এতে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক বনে যান।
মেহেরপুরে ফিরে নিজেকে শিল্পপতি দাবি করেন। মেহেরপুর শহরের প্রবেশপথেই স্থাপন করেছেন একটি অটো রাইস মিল। আওয়ামী লীগের গত দুই সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নেওয়ার জন্য এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালান।
২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলতে গেলে তাকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা চড়-থাপ্পড় ও গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময় সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, গোলাম রসুল, বিএনপির জেলা সভাপতি মাসুদ অরুণের নামে বিষোদ্গার করে বেড়াতে থাকেন।
গত দুই সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিতে টাকা খরচ করেছিলেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় সমালোচনা শুরু হয়।
হাবিবুরের চাচাতো ভাই ভ্যানচালক রজব আলী বলেন, হাবিব আমার চাচার ছেলে। খুব দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠে সে। মাটির ঘরে বসবাস করত। এত গরিব ছিল যে, তিনবেলা খাবার জোগাতে পারত না। এখন গ্রামে আলিশান বাড়ি, গাড়ি, বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। কীভাবে এত টাকা পেল তা গ্রামের সবার কাছে বিস্ময়ের।
পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা লিয়াকত মিয়া বলেন, হাবিবের উত্থান যেন আলাউদ্দিন চেরাগের মতো। কোথা থেকে এত টাকা পেলেন, তা কেউ জানে না। এত দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার, কী করে এত টাকা হলো। গ্রামে আলিশান বাড়ি, শহরে রাইস মিল, দামি গাড়িতে চলাচল করেন।
পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু আনসার বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর হাবিব গা-ঢাকা দিয়েছে। খুব গোপনে এলাকায় আসেন। এলাকার মানুষ তার প্রতি ক্ষিপ্ত। চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকেই ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি শেখ কনি মিয়া বলেন, হাবিবুর রহমানের নামে সদর থানায় মামলা রয়েছে। কয়েক দফা গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। এখন জামিনে রয়েছে। মামলাগুলো মূলত চিটিং মামলা। এ ছাড়া ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে দুটি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন