চুরির অভিযোগে সাব্বির হোসেন (২৩) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত আড়াইটার দিকে থানা থেকে পালিয়ে যান ওই যুবক। এরপর জঙ্গলের রাজা টারজান বয়ের মতো যশোর শহরের সিটি প্লাজা বহুতল ভবনের কার্নিশে কার্নিশে আট ঘণ্টার অধিক সময় ধরে ঝুলে থাকেন তিনি।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিটি প্লাজার পূর্ব পাশের ওয়াচ টাওয়ারের এসির উপর থেকে দুই তলা ছাদের টিনের উপর পড়ে যায় ওই যুবক। পড়ে যাওয়ার শব্দ ও আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজনের ঘুম ভেঙে যায়। ততক্ষণে সাব্বির কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিটি প্লাজার দক্ষিণ প্রান্তে সড়কের কাছে সিটি ব্যাংকের সামনে আসেন।
এ সময় বিপুলসংখ্যক উৎসুক জনতা ও পুলিশ থাকায় তিনি থাই গ্লাসের কাচ ভেঙে নিজের হাতে নিয়ে দর্শকদের হুমকি দিতে থাকেন। তাকে ধরার চেষ্টা করলে খণ্ড কাচের টুকরো নিজের পেটে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করবেন। পরে এখান থেকে পালিয়ে আবারও সিটি প্লাজার কার্নিশে গিয়ে ওঠেন।
সকাল ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থালে আসেন। মই দিয়ে তাকে নিচে নামানোর চেষ্টা করলে সে ভবনের কার্নিশ ও সেনেটারি পাইপ ধরে পাঁচতলার উপরের দিকে উঠতে থাকেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তার প্রেমিকাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে এসে তাকে দিয়ে অনেক অনুরোধ করেও নামাতে পারেননি।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ৫ ঘণ্টা ধরে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। পরে আশা ছেড়ে দিয়ে তারা ফায়ার স্টেশনে ফিরে যান। লোকজন কমে গেলে তিনি নামতে গিয়ে ভবনের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। সেখান থেকে তিনি দুপুর ১২টার দিকে কাউকে কিছু না বলে তার মা ও আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর পলিটেকনিক কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সাব্বির চুয়াডাঙ্গা জীবননগর বাসস্ট্যান্ড এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সে যশোরে আসে এক নারীর সঙ্গে দেখা করতে। ওই নারীর সঙ্গে দিনে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করেন। রাতে পূর্ব পরিচয়ে যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হলে একজনের ম্যাচে ওঠেন। সেখানে ফোন ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করেন।
পরে ওই যুবক যশোর এমএম কলেজে দর্শন বিভাগে পড়ুয়া তার সেই প্রেমিকাকে ফোন দিলে ওই প্রেমিকা পুলিশকে জানায়। মধ্যরাতে পুলিশ যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে সাব্বিরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। সকালে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি সাব্বির রাত আড়াইটার দিকে থানা থেকে পালিয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চুরির ঘটনাটি সঠিক নয়। তার এক বান্ধবীর অভিযোগের ভিত্তিতে থানার এসআই ইমরানসহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য পলিটেকনিক কলেজের আবাসিক হলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার সাকিরুল ইসলাম বলেন, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পুলিশ আমাদের জানায় তিনি ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরপর বেলা একটার দিকে জানতে পারি ওই যুবক ও তার পরিবারের লোকজন ওয়ার্ডের কাউকে কোনো কিছু না বলেই পালিয়ে গেছেন।
মন্তব্য করুন