গত ৫ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৬ দিন ধরে অনুপস্থিত পাবনা বেড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক। এতে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পলিচালনা করতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্য শিক্ষকরা।
স্থানীয়রা জানান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ভাতিজি জামাই হিসেবে পরিচয় দিতেন অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক। সে পরিচয়েই প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের ছেলেমেয়ের এইচএসসি বা ডিগ্রির ফরম পূরণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।
এছাড়া গত জাতীয় নির্বাচনে সাবেক ডেপুটি স্পিকার, পাবনা-১ আসনের সাবেক এমপি শামসুল হক টুকুর এজেন্ট হিসেবে সরাসরি কাজ করেছিলেন তিনি। এ কারণে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়াও পৌর, উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনেও প্রতিপক্ষের এজেন্ট বের করে দেওয়ার মতো ঘটনাও তিনি ঘটিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, তার বিরুদ্ধে এসব নানা অভিযোগ থাকায় গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভয়ে আর কলেজে আসছেন না এই অধ্যক্ষ।
সরেজমিনে কলেজে গিয়ে তার কক্ষে তালা দেওয়া দেখা যায়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অধ্যক্ষের কক্ষে থাকার কারণে পাঠদানে অংশ নিতে আসা অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, আমরা প্রিন্সিপাল স্যারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তিনি আসবেন আসবেন বলে এখন পর্যন্ত আসেননি। এতে আমাদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ বিষয়ে বেড়া সরকারি কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালমান হোসেনের কাছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেড়া সরকারি কলেজের একটি ফেসবুক পেইজ আছে সেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করতে বলা হয়েছিল।
বেড়া-সাঁথিয়ার ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মো. তৌফিক হাসান রাফুল বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিভিন্নভাবে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। আমাদের ছবি দেখিয়ে দেখিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক স্যার সরাসরি বিরোধিতা না করলেও পুলিশি হয়রানিতে সহযোগিতা করেন।
এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন কলেজে উপস্থিত না হওয়া এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে খুব শিগগিরই কলেজে যোগদান করব।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মোরশেদুল ইসলাম জানান, বেড়া কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক সাহেব যে ৪৬ দিন কলেজে আসেনি এটা আমার জানা নেই। এর মাঝে একদিন আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন তিনি কলেজে যাচ্ছেন। কলেজে না আসার বিষয়ে কলেজ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন