গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে চরম বিপাকে পড়েছেন পাবনার চাটমোহরের গবাদি পশুর মালিকরা। সংকট মোকাবিলায় বিকল্প হিসেবে এ এলাকার শত শত মানুষ তাদের গৃহপালিত গরু, মহিষকে কচুরিপানা খাওয়াচ্ছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এ এলাকার বিলগুলোতে বর্ষার পানি প্রবেশ করায় গবাদি পশুর চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
খড়, খইল, ভুসিসহ অন্যান্য খাবারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও পশু মালিকরা। গরু-মহিষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে সম্পূরক খাবার হিসেবে অনেক পশু মালিক কচুরিপানার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগের জরিপ অনুযায়ী, চাটমোহরে ৩২৮টি গাভির খামার, ২৩২টি মোটা তাজাকরণ খামার, ছাগল ভেড়ার ৭০টি খামার রয়েছে। এসব খামারে ২৭ হাজার ৯২৮টি গাভি, ৩০ হাজার ৪৫টি ষাঁড়, ২৯ হাজার বকনা গরু রয়েছে।
এ ছাড়া ২ হাজার ৬৪৯টি মহিষ রয়েছে। অনিবন্ধিত খামারেও গবাদি পশু পালিত হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক প্রাণীর খাদ্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন এ এলাকার পশু মালিকরা।
জানা গেছে, উপজেলার নিমাইচড়া, হান্ডিয়াল ও বিলচলন ইউনিয়নের আংশিক এলাকার বিলগুলোতে বন্যায় আগাম পানি প্রবেশ করে। আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রায় চার মাস মাঠে পানি থাকায় গরু-মহিষকে মাঠে নিয়ে খাওয়ানো সম্ভব হয় না।
এ সময় পুরোপুরি খড়, খইল, ভুসিসহ অন্যান্য দানাদার খাবারের ওপর নির্ভর করতে হয় পশু মালিকদের। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে কৃষক বোরো ধানের কিছু খড় পেলেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। ভাটি এলাকায় খড়ের দাম আরও বেশি হওয়ায় সেসব এলাকার খড় ব্যবসায়ীরা চাটমোহরসহ উজান এলাকা থেকে চড়া দামে বোরো ধানের খড় কিনে নিয়ে যান।
গ্রামের সানা উল্লাহ জানান, ভুসির দাম বেশি। গরুর দুধের টাকায় খাদ্য হয় না। ৪৭ টাকা লিটার দুধ। এক আঁটি খড়ের দাম ৭ টাকা। এক-একটি গরুকে তিন থেকে চার আঁটি খড় দিই আর কচুরিপানা খাওয়াই। নিজেরও বাঁচতে হবে গরুগুলোও বাঁচাতে হবে। এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার সরকার জানান, কচুরিপানা
গবাদি পশুর আদর্শ খাবার নয়। কচুরিপানায় পানির পরিমাণ বেশি থাকে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটের কারণে অনেকে কচুরি পানা খাওয়ান। দীর্ঘমেয়াদে অধিক পরিমাণ কচুরিপানা খাওয়ানো গবাদি পশুর জন্য ক্ষতিকর। মাত্রাতিরিক্ত কচুরিপানা খাওয়ালে গবাদি পশুর পাতলা পায়খানা বা বদ হজম হতে পারে। আমরা গবাদি পশুর মালিকদের সাইলেস পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষণের জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। এ পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষণ করলে আপৎকালীন সময়ে গবাদি পশুর মালিকরা লাভবান হবেন।
মন্তব্য করুন