৭ মাস আগে হারিয়ে যায় বাকপ্রতিবন্ধী জুয়েল (৩২)। অনেক খোঁজখুঁজির পরও কোথা তার সন্ধান না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন তার পরিবার। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে হারানো সন্তান ফিরে পেলেন বাবা-মা। ৭ মাস আগে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত পরিবারটি।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) যশোর কৈখালী জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বাকপ্রতিবন্ধী যুবককে তার বাবা-মায়ের কাছে ফেরত দেওয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রামের বাসিন্দা মতলেব আলী। তার দুই মেয়ে ও একমাত্র ছেলে জুয়েল। বাকপ্রতিবন্ধী, দীর্ঘ সাত মাস আগে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। সন্তান ফিরে আসবে এই ভেবে পথের দিকে চেয়ে থাকতেন বাবা-মা। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা পাগল প্রায়। ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে চোখে যেন ছানি পড়ে গেছে তাদের। হঠাৎ করেই অবসান হলো দীর্ঘদিনের অপেক্ষার। নিখোঁজের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ফিরে পেল আপন ঠিকানা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৭ মাস আগে বাকপ্রতিবন্ধী জুয়েল বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি। চারদিকে খোঁজাখুঁজি, হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়েও তার খোঁজ মেলেনি। কোথাও খোঁজ না পেয়ে তারা ধরেই নিয়েছিলেন জুয়েল আর বেঁচে নেই। পরবর্তীতে গত শুক্রবার এসকেএম সজীব নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে হাস্যকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায় জুয়েলকে। জুয়েলের পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করে যশোর কৈখালী আশ্রয়দাতা অনিকের বাসায় হাজির হন। দীর্ঘদিন পরে একমাত্র ছেলেকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। অন্যদিকে সন্তানের মতো লালন-পালনকারী অনিক চক্রবর্তী পরিবারের চোখে জল। এতদিন যাকে সন্তান স্নেহে বড় করেছিলেন, সে চলে যাবে। কিছুতেই মনকে শান্ত করতে পারছিলেন না তারাও।
অনিক চক্রবর্তী জানান, তার মন খারাপ হলেও জুয়েল তার প্রকৃত বাবা-মাকে ফিরে পেয়েছে এতেই তিনি খুশি হয়েছেন। নিজের সন্তান না হলেও সে আমার সন্তানতুল্য। এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকবে। ওর জন্য আরও কিছু যদি করতে হয়, আমি করব।
তিনি আরও জানান, নিখোঁজ কামরুলকে ৭ মাস আগে যশোর রুস্তমপুর বাজার থেকে কোনো অভিভাবক না পেয়ে অনিক চক্রবর্তী বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে ১ মেয়ে ও দুই ছেলের সঙ্গে সন্তানের মতোই ছিলেন। ধ্রুব ও জুয়েল ভাইয়ের মতো একসঙ্গে থাকত। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় বাকপ্রতিবন্ধী জুয়েলও পূজা করত। সে ছিল অত্যন্ত বিশ্বস্ত।
জুয়েলের মা সালমা খাতুন জানান, সন্তানহারা মা কীভাবে থাকতে পারে? ৭ মাস কীভাবে থেকেছি আমি জানি। এত দিন সন্তানকে পেয়ে মনে হয়েছে যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছি। আমার বুকটা ভরে গেছে। আল্লাহ আমার বুক আবার ভরে দিয়েছেন।
জুয়েলের বাবা মতলেব আলী বলেন, আজ নিজের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। যে কষ্ট এতদিন বুকে বিঁধে ছিল তা দূর হয়েছে। তিনি লালন-পালনকারী অনিক চক্রবর্তীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, উনি আমাদের চিরদিনের মতো আত্মার আত্মীয় হয়ে গেলেন।
মন্তব্য করুন