কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার ২৯ হাজার ১৫০ কৃষক। ঘরে তোলার অপেক্ষায় রাখা ফসলসহ অন্যান্য ফসল হারিয়ে হতাশায় দিন পার করছেন কৃষকরা।
উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে গোমতী এবং সালদা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যার শিকার হয় ব্রাহ্মণপাড়া। যার ফলে উপজেলার অধিকাংশ ফসলি জমি ক্ষতির মুখে পড়ে। এতে উপজেলার ৫ হাজার ৩২ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যায়। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৭২ হেক্টর জমির ফসল। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ২৬০ হেক্টর জমির ফসল। এতে আধাপাকা ও পাকা আউশ, আমন ধানের ক্ষেত, আমন বীজতলা ও শাকসবজি বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে এ উপজেলায় ফসলের ৯০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যায় এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৯ হাজার ১৫০ কৃষকের নানা জাতের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন ২৩ হাজার ৬৫০ কৃষক। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকদের সঙ্গে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কথা হয় উপজেলার কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সঙ্গে। তারা জানান, আকস্মিক বন্যায় তাদের আধাপাকা ও পাকা আউশ ধান তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও আমন ক্ষেত, আমন বীজতলা এবং নানা জাতের শাকসবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন বন্যার পানি অনেকটা কমেছে, তবে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে চারিদিকে শুধু ক্ষতির চিহ্ন।
উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা এলাকার কৃষক কামাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমার ৯০ শতক জমির পাকা ধান বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও আমার খামারের গরুর জন্য চাষ করা ১৫ শতক জমির ঘাস নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে তোলার আগমুহূর্তে এভাবে পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কষ্ট সইতে পারছি না।
উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া এলাকার কৃষক তবদল হোসেন কালবেলাকে বলেন, দেখতে দেখতেই বন্যার পানিতে পাকা ধান তলিয়ে গেছে। একটু সুযোগও দেয়নি ধান ঘরে তোলার। ফসলের পাশাপাশি ঘরবাড়িরও ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়ন মহালক্ষীপাড়া এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, এ বছরে আমি ৭২ শতক জমিতে আউশ ধান আবাদ করেছিলাম। ধান পাকা শুরু করেছিল। এরই মধ্যে ভয়াবহ বন্যার পানি এসে সবকিছু নষ্ট করে দিয়ে গেছে। এতে আমার পথে বসার মতো অবস্থা হয়েছে। জমির পানি এখনো পুরোপুরিভাবে কমেনি, জানি না আমন ধানের আবাদ করতে পারব কিনা। আমন আবাদ করতে না পারলে বউ-ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, বন্যায় এই উপজেলার অধিকাংশ ফসলি মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কৃষকদের আধাপাকা ও পাকা আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও আমনের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা এবং আগাম শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার ২৩ হাজার ৬৫০ কৃষক। তিনি বলেন, কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আমন ধান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রান্তিক কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলার দুই হাজার কৃষকের মধ্যে নগদ অর্থ, বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন