কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে প্রায় ৩ ঘণ্টা পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ রাখেন এলাকাবাসী। এ সময় দুই পাড়ে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে। উভয় পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নসহ আশপাশের প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুণ্ডুর আশ্বাসে এলাকাবাসী অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। এরপর তিনি এলাকাবাসীকে নিয়ে নদী ভাঙনকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করেন।
এ সময় দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। প্রয়োজনের সেনাবাহিনী নামানোর আহ্বান জানানো হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে ভুক্তভোগীরা উল্লেখ করেন, পদ্মা নদীর ভাঙনে বাহিরচর ইউনিয়নের ১২ মাইল টিকটিকিপাড়া, মুসল্লিপাড়া, মুন্সিপাড়া, পশ্চিম বাহিরচর, মোসলেমপুর, চরখাদিমপুর, সর্দারপাড়া, গাইনপাড়ার হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা নদীর ভাঙন এতটাই বিধ্বংসী রূপ নিয়েছে যে, বর্তমানে এটা লোকালয়কে গ্রাস করছে। তাদের অভিযোগ, এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে যে কোনো সময় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
ভুক্তভোগী মালা খাতুন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি আগে থেকে ব্যবস্থা নিত তবে এত ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া লাইগত না। বিগত এমপিরা শুধু আশ্বাসই দিছে, কিছুই করিনি। তারা শুধু এলাকায় আসত আর চইলি যাইত। শুধু শুইনেই গেছি প্রকল্প পাশের কথা, কোনোদিন কাজ করতে দেখিনি।’
জানা গেছে, ভাঙনকবলিত পদ্মার ওপাড়ে ঈশ্বরদীর রূপপুরে পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণ হওয়ায় পদ্মা নদীর ভেতরে গভীর থেকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর পানি সেখানে ধাক্কা খেয়ে নদীর গতিপথ সরে গিয়ে এপাড়ে পানি ধাক্কা দিচ্ছে। এতেই ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনকবলিত এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। তাদের দাবি, এভাবে ভাঙতে থাকলে আর কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে দু-এক দিনের মধ্যেই কয়েকটি গ্রামের বড় অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা জমিরুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ফসলের জমিতো নদীভাঙনে আগেই শেষ। এখন আমাদের শেষ আশ্রয় বাড়ি বিলীনের পথে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুণ্ডু কালবেলাকে বলেন, ভাঙন রোধে কাজ চলমান রয়েছে। আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালবেলা পত্রিকায় ভাঙন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় এরই মধ্যে বেশকিছু কাজের অনুমোদন পাওয়া গেছে। পানি কমে গেলে আরও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। এ সমস্ত এলাকাকে রক্ষা করার জন্য আমাদের যা কিছু করা সম্ভব, আমরা তাই করব।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেছেন, আমরা ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলেছি। এরই মধ্যে আমরা নতুন কিছু কাজের অনুমোদন পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার কাজ করেছি। ভেড়ামারার বাহিরচর ইউনিয়ন এবং পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন