রাজশাহী কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ৮ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক ড. মো. আনারুল হক প্রামাণিক। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলেজে এসে দায়িত্ব গ্রহণের আড়াই ঘণ্টার মাথায় পদত্যাগ করেন তিনি। গত ৯ সেপ্টেম্বর পদায়নের দিন থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের মুখে পড়েন অধ্যাপক ড. মো. আনারুল হক।
সাদা কাগজে পদত্যাগপত্রে ড. মো. আনারুল হক প্রামাণিক লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করলাম। বিষয়টি সদয় বিবেচনার জন্য পাঠানো হলো।’
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১২ আগস্ট পদত্যাগ করেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রফেসর আনারুল হককে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি রাজশাহী নগরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
এর আগে তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন। তবে দেশসেরা রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়নের দিন থেকেই তাকে বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচার সরকারের দালাল, শিক্ষক নামের পা চাটা গোলাম অ্যাখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদানসহ প্রশাসন ভবনে তালাও ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। তবে ধারাবাহিক এই আন্দোলনকে উপেক্ষা করে মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় দায়িত্ব গ্রহণ করতে কলেজে আসেন প্রফেসর আনারুল হক।
পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলে ছাত্রদলের ১৫-২০ নেতাকর্মী প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের সরিয়ে প্রফেসর আনারুল হককে অধ্যক্ষ কক্ষে নিয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং দলে দলে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে একত্রিত হন। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বেরিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে দুপুর ২টার দিকে পদত্যাগ করে নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ক্যাম্পাস ছাড়েন প্রফেসর ড. আনারুল হক।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকার সময় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বোর্ডের ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০২০ সালে প্রফেসর আনারুল হকের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আত্মসাতের সমপরিমাণ টাকা বোর্ডের ফান্ডে জমা দেওয়ার মাধ্যমে মামলা থেকে অব্যাহতি পান তিনি। পরে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন বিতর্কিত এই শিক্ষক, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উঠে আসে। পরে রাজশাহী বোর্ড চেয়ারম্যানের স্বপ্নপূরণ না হলেও তৎকালীন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সুপারিশে রাজশাহীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ার বাগিয়ে নেন। এবার তিনি দেশসেরা রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের সমন্বয়কারী মহুয়া জান্নাত মৌ বলেন, রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ্য অধ্যক্ষ চান। শেখ হাসিনার কোনো দোসরকে আমাদের পবিত্র ক্যাম্পাসে জায়গা দেওয়া হবে না। এ কারণেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে।
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে প্রফেসর ড. আনারুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
তবে রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইব্রাহীম আলী পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে তিনি (আনারুল হক) পদত্যাগ করেছেন।
মন্তব্য করুন