নিম্নচাপের প্রভাবে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় টানা ভারি বর্ষণের ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার পৌর শহরের দক্ষিণ বন্দর স্লুইসগেট গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত স্লুইসগেট ভাঙেন ক্ষতিগ্রস্ত পানিবন্দি বিক্ষুব্ধ শত শত কৃষক জনতা।
জানা গেছে, ১৫-২০ বছর আগের নির্মিত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু স্লুইসগেট দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে স্লুইসগেটের দরজা উঠানো নামানোর জন্য কোনো লোক নিয়োগ নেই। যার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে কিছুসংখ্যক লোক মাছ ধরার জন্য তাদের সুবিধামতো স্লুইসগেটের কপাট উঠানো ও নামানো করেন, যা কৃষকদের কোনো কাজেই আসে না।
এ দিন সকালে সরেজমিনে শহরের দক্ষিণ বন্দর স্লুইসগেট স্থলে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত কৃষক জনতা একত্র হয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ওই পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইসগেট। অপরিকল্পিত স্লুইসগেট করায় ভারি বর্ষণ ও অতি জোয়ারের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ে শত শত পরিবার এবং কৃষকের মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয় বলে কৃষকরা দাবি করেন।
কৃষকরা জানান, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন খালে স্লুইসগেটের অব্যবস্থাপনা ও খাল দখল হয়ে যাওয়ার কারণে ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা অপসারণের কোনো ব্যবস্থা নাই। অপরদিকে উপজেলা বেতমোর ইউনিয়নের কালিরহাট ব্রিজ সংলগ্ন খালে দীর্ঘদিনের বাঁধ কেটে দেয় বিক্ষুব্ধ কৃষকরা।
উপজেলার আঙ্গুলকাটা গ্রামের কৃষক মোশারেফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, মঠবাড়িয়ার তিন লাখ মানুষ আজ পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। আমরা পানিবন্দি হওয়ার কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিধায় আমরা কৃষকরা একত্রিত হয়ে অপরিকল্পিত স্লুইসগেটটি ভাঙ্গতে আসছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ অপরিকল্পিত স্লুইসগেটটি অপসারণ করে একটি পরিকল্পিত স্লুইসগেটের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেনি।
উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শামিম হাওলাদার কালবেলাকে বলেন, প্রায় ২০০ বিঘা জমি জলাবদ্ধতার কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রান্না করার চুলায় পানি উঠে যাওয়ায় শত শত পরিবার তাদের রান্নাবান্না করতে পারছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মহসেনুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, আমাদের প্রধান প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে সরেজমিনে এ স্লুইসগেটটি পরিদর্শন করেছেন। তারা এ স্লুইসগেটটি অপসারণ করে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সুপারিশ নোট যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবদুল কাইয়ূম কালবেলাকে জানান, রোববার এবং এর আগেও কৃষকরা এ স্লুইস গেটের ব্যাপারে এসেছিল, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ইতোপূর্বে চিঠি পাঠিয়েছি। তারা জানিয়েছে এ স্লুইসগেট ভাঙতে টেকনিক্যাল লোকজন দরকার। তাই বরিশাল থেকে লোকজন গিয়ে ভাঙার কাজ শুরু করবে।
মন্তব্য করুন