কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর হুইল চেয়ার পেল নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আদিবাসী পল্লি লক্ষ্মীপুর দিঘীপাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী এতিম শিশু রনি মুরমু (৯)। এতে হুইল চেয়ারে করে স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো তার।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় অলাভজনক বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা রোটারি ক্লাব অব কাওরান বাজার ও ন্যাশনাল এজেন্সি ফর গ্রিন রিভ্যুলেশন (এনএজিআর) সংস্থার চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমনুরা মিশন শাখার উদ্যোগে একটি হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়। এর আগে ‘একটি হুইল চেয়ার পেলে স্কুলে যেতে পারতাম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ কালবেলা।
এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আগত ন্যাশনাল এজেন্সি ফর গ্রিন রিভ্যুলেশন (এনএজিআর) -এর নির্বাহী পরিচালক ও আমনুরা রোটারি কমিউনিটি কোর এর উপদেষ্টা স্টেফান সরেন কালবেলাকে জানান, গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কালবেলার সংবাদটি আমার চোখে পড়ে। সংবাদটি পড়ে আমি ভীষণভাবে মর্মাহত। তাই রনি মুরমুকে এক নজর দেখতে সুদূর চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমনুরা মিশন থেকে প্রতিবন্ধী এতিম শিশু রনি মুরমুর বাড়িতে আসলাম একটি হুইল চেয়ার দেওয়ার জন্য।
এ সময় তিনি সরকার এবং সমাজের বৃত্তবান মানবিক মানুষদের এ এতিম শিশুটির পাশে থাকার আকুল আবেদন জানান।
প্রতিবন্ধী রনির নানি সনতি মুরমু (৬২) কালবেলাকে বলেন, আমার স্বামী নাই, ২০ বছর হলো মারা গেছে। মেয়েটাও নাই, আবার টাকাপয়সাও নাই। সংসারে অভাব অনটন, তার ওপর প্রতিবন্ধী নাতি রনি। আমি বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার নাতির বাবা-মা কেউ নাই। তাদের ভোটার আইডি কার্ডও সংগ্রহ করতে না পারার জন্য প্রতিবন্ধী কার্ডটাও করতে পারছি না। আমি মারা যাওয়ার আগে যতি ওর কার্ডটা হয়ে যাওয়া যদি দেখে যেতে পারতাম। তাহলে মরেও শান্তি পেতাম।
রনির নানি কালবেলা ও যিনি হুইল চেয়ার প্রদান করেছেন তার উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন। গির্জায় গিয়ে আমি এই প্রার্থনা করবো।
রনির চলার পথে সাহায্য করা পিসির ছেলে বর্ষন (১০) জানায়, চেয়ারটি পেয়ে ভালোই হলো। স্কুলে বা বাজারে ওকে নিয়ে যেতে আগের মতো আর কষ্ট হবে না আমার।
চেয়ার পেয়ে রনি মুরমু আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে- আমি হাঁটতে পারি না, হুইল চেয়ার পাইছি। এখন থেকে আমি এই গাড়িতে চড়ে স্কুলে যাবো, বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারবো।
এসময় আমনুরা রোটারি কমিউনিটি কোর -এর সভাপতি এবং এনজিআর সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার প্রদীপ হেমরম জানান, অলাভজনক বেসরকারি সংস্থাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ উত্তরবঙ্গের ৬টা জেলায় সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসচেতনতা, বাল্যবিবাহ রোধ ও মাদকদ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ পারিবারিক আয় বর্ধনমূলক পরামর্শ নিয়ে কাজ করে চলেছে।
এসময় কালবেলা চাঁপাই প্রতিনিধি আবুল হায়াত শাহিন, কালবেলা সাপাহার প্রদীপ সাহাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন