রাশিয়া থেকে দেশে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইট ও অ্যাপস। তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে মেহেরপুর জেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এ চিত্র দেখা যাচ্ছে। ‘মহামারির’ মতো ছড়িয়ে পড়া এসব জুয়ার সাইট ও অ্যাপস ব্যবহার করে প্রত্যেক এজেন্টের মাধ্যমে মাসে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
অতি সম্প্রতি এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তার ফোন কল রেকর্ড কালবেলায় প্রকাশিত হয়। যাতে আলোচিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আজমল হোসেন ও তার এক অধস্তন সহকর্মী এসআই সাহেব আলীকে কথা বলতে শোনা যায়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তা আজমল হোসেন নিজেকে ‘অনলাইন জুয়া চ্যানেলের একচ্ছত্র মালিক’ বলে দাবি করে। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
তবে সবকিছু পেছনে ফেলে গত ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে প্রায় বছর খানেক আগে মেহেরপুর থেকে মৌলভীবাজার বদলি হয়ে যাওয়া সমালোচিত এই এএসপি মো. আজমল হোসেনকে পুনরায় মেহেরপুরে সদর (সার্কেল) কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) স্থানীয়দের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা হলে তারা এএসপি আজমলের বদলির আদেশ প্রত্যাহারসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সূত্র বলছে, রেডি অ্যাপস ও ম্যানেজমেন্ট অ্যাপসের যুগলবন্দিতে দীর্ঘদিন এমনই ভয়াবহ কর্মকাণ্ড চলছে পুরো মেহেরপুরজুড়ে। ওই দুই অ্যাপসই রাশিয়ার তৈরি। এর মধ্যে রেডি অ্যাপস রাশিয়া থেকে আর ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস আর্থিক লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত হয়। তবে ম্যানেজমেন্ট অ্যাপসটি রাশিয়া থেকে পরিচালিত রেডি অ্যাপসের সঙ্গে সংযুক্ত না হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো কার্য সমাধান করতে পারে না। ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ মূলত বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্ট সিম ব্যবহার করে মেইন সাইট, এজেন্ট ও জুয়াড়িদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
মূলত ওয়ান এক্স বেট, মেলবেট, মোস্ট বেট, টি-টোয়েন্টি বেট ও টোয়েন্টি ফোর বেট অনলাইন জুয়ার সাইটগুলোর এজেন্ট ডিলারশিপ হিসেবে ভূমিকা রাখে রেডি অ্যাপ। অ্যাপটির অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও ডেক্সটপ বান্ধব।
সূত্র জানায়, মেহেরপুর কর্মরত অবস্থায় এএসপি আজমল বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়ার মাস্টার এজেন্টদের আটক করতেন। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাদের এজেন্ট চ্যানেল ছিনিয়ে নিতেন। পরে সেই জুয়ার এজেন্ট চ্যানেল তিনি সহকর্মীসহ অন্যদের কাছে বিক্রি করতেন। তৎকালীন সময়ে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির কাছে আজমলের নামে অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। যে কারণে তিনি পুলিশ সুপার (এসপি) পদে পদোন্নতি পাননি।
মেহেরপুর জেলা যুবদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হুজাইফা ডিক্লেয়ার কালবেলাকে বলেন, ‘যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অফিসার নিজেই অনলাইন জুয়ার সাম্রাজ্য চালান তাহলে এ মহামারি রুখবে কে? তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
তবে এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস মাসুদ অরুন কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
মেহেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা তাজ উদ্দিন খান কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা সব প্রকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে। মেহেরপুর জেলাকে মাদক ও অনলাইন জুয়া মুক্ত করতে জেলা প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করা হবে। কালবেলাতে যে কথোপকথনটি ভাইরাল হয়েছে সেটি আমি শুনেছি। পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ করবো যেন অতিদ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’
খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক কালবেলাকে বলেন, ‘আমি মাত্র ৫ দিন আগে খুলনা রেঞ্জে যোগদান করেছি। কালবেলাতে ভাইরাল অডিওটা শুনেছি। আজমল হোসেনের মেহেরপুর জেলাতে পদায়নের বিষয়ে অফিসিয়াল কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত আমার জানা নেই। ছুটি শেষে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অফিসে গেলে হয়তো এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারব। কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন