কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদে কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানি লোকালয়ে থাকায় শিশুখাদ্য ও সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৭৩টি গ্রামের সব নলকূপ এখনো পানির নিচে থাকার কথা জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। এতে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে শিশুসহ এ এলাকার লাখ লাখ মানুষ। বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি পূরণে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলোতে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। এলাকার বিভিন্ন সংস্থা থেকে ত্রাণ সহায়তা পেলেও শিশুদের জন্য নেই কোনো শিশু খাদ্যের ব্যবস্থা।
আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাকবলিত এলাকায় গেলেই শিশুদের কান্নাকাটির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ত্রাণ সহায়তা হিসেবে আসা চিড়া, মুড়ি, বিস্কুটের অধিকাংশই খেতে চায় না শিশুরা। গুঁড়াদুধ, সুজি, সাবু, বার্লিসহ শিশুখাদ্যের কোনোটিই যাচ্ছে না ত্রাণ সহায়তায়। ত্রাণ হিসেবে প্যাকেট যাই আসছে সবগুলোতেই থাকছে বেশিরভাগ শুকনো খাবার। এতে শিশুদের খাদ্য নিয়েও বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। তাছাড়া সাম্প্রতিককালের বন্যায় মফস্বলের এসব এলাকার দোকানগুলোতে শিশুখাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা সদরের মনোহরগঞ্জ সরকারি স্কুল ও কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিশুরা। শিশুখাদ্য, শিশুদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মফস্বল এলাকায় খুব একটা পাওয়া যায় না।
এ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০ শিশু রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ত্রাণ হিসেবে যা পাওয়া যায় শিশুদেরও তাই খাওয়াতে হয়। বন্যা পরিস্থিতিতে শিশুখাদ্য নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়ার কথা জানান তারা। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সবচেয়ে প্রয়োজন নিরাপদ খাবার পানি। সে লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মনোহরগঞ্জ উপজেলা মোবাইল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে প্রতিটি আশ্রয়ণে খাবার পানি সরবরাহ করছে। যেখানে গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয় সেখানে জেরিকেন হাইজিনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উপজেলার আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আকলিমা জাহান কালবেলাকে জানান, সুষম খাদ্যের অভাবে শিশুদের মাঝে পুষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে। ছয় মাসের পর থেকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুদের পারিবারিক যে কোনো খাবার দেওয়া যেতে পারে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৬টি মেডিকেল টিম বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যার্ত মানুষের চিকিৎসা সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন