মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দুই শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ১ কোটি ২০ হাজার টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। নিয়মমাফিক টাকা জমা দিয়েও বছরের পর বছর ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির কর্মকর্তাদের পিছু ঘুরে টাকা না পেয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে শতাধিক গ্রাহক নিয়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তারা।
গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, স্থানীয় হালিম মৃধা ও আবুল হোসেনের মাধ্যমে তারা বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে টাকা জমা দেন। কিন্তু বিমার মেয়াদ শেষ হলেও তারা এখনো টাকা পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগী বড় রায়পাড়া গ্রামের আয়েশা বেগমসহ কয়েকজন গ্রাহক জানান, দ্বিগুণ লাভের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় অফিস বন্ধ, এরিয়া ম্যানেজারের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। ফোন করলে ফোন রিসিভ করে না। আমরা আমাদের প্রাপ্য টাকা ফেরত চাই।
বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য সোলেমান হোসেন ঢালী বলেন, আমিও প্রতারণার শিকার। বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের শত শত মানুষ বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সদস্য হয়েছেন। ১২ বছর ধরে অনেক মানুষ টাকা দিয়ে আসছেন। মেয়াদপূর্তি হলেও কাউকে মূল বা লাভের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের প্রাপ্য টাকা ফেরত চাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষকে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলেন। এলাকার সাধারণ মানুষকে একে একে সদস্য বানিয়ে মাসিক কিস্তি সংগ্রহ করতে থাকেন। গ্রাহকরা বিশ্বাস করে ২০০ বা ৫০০ টাকা মাসপ্রতি জমা দিতে থাকেন। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে থাকেন এবং আশায় বুক বাঁধেন। মেয়াদপূর্তিতে বিশাল অঙ্কের টাকা গ্রাহকদের পাওয়ার কথা থাকলেও ঘটেছে তার উল্টো, প্রাপ্য টাকা পাননি কেউই।
এ বিষয়ে বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তৎকালীন এরিয়া ম্যানেজার হালিম মৃধা বলেন, সাধারণ মানুষ না বুঝে, সেসঙ্গে অধৈর্য হয়ে আমাকে অভিযুক্ত করছেন। আমি গ্রাহকের টাকা কোম্পানির নিয়মমাফিক অফিসে জমা দিই; কিন্তু মেয়াদপূর্ণ হলেও এখন কোম্পানি টাকা দিচ্ছে না। আমি নিজেও এ মুহূর্তে অসহায় বোধ করছি।
এ বিষয়ে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তা রিসিভ না করে ফোন বন্ধ করে রাখেন।
মন্তব্য করুন