গত দেড় মাস যাবত বন্যা এবং অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের বিভিন্ন এলাকা। পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। কোমর সমান পানির মধ্যে বসবাস করছে প্রায় দেড় মাস। তবে খাবারের সংকট কাটলেও কাটেনি বিশুদ্ধ পানির সংকট।
কমলনগরের কাদিরা ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই বললেই চলে। বাড়ি বাড়ি কিছু পানির টিউবওয়েল থাকলেও সেগুলো রয়েছে বন্যার পানির নিচে। খাবার ও গোসলের পানির বড়ই অভাব ও মহাসংকট দেখা দিয়েছে ওই এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কমলনগরের চর কাদিরা ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানির নিচে আটকা পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পুরো এলাকার চারদিকে পানিতে প্লাবিত বাড়িঘর। ঘরের ভেতরে পানি থৈ থৈ করছে। রান্নার চুলা নেই, ঘরের ভেতরে চৌকির ওপর গ্যাসের চুলায় রান্না করছে কিছু পরিবার।
কলসি ভরে পানি নেওয়া আব্দুল আজিজ জানান, পানিবন্দি অনেক দিন। ভোগান্তি আর ভালো লাগে না। কতদিন পানিতে থাকা যায়? ঘরে-বাইরে হাঁটু পরিমাণ পানি। পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছি। বাড়ির বিশুদ্ধ পানির কল দূষিত পানির নিচে, খাবার পানি দূর থেকে আনতে হচ্ছে।
স্থানীয় আখতার মাহমুদ জানান, বিগত দেড় মাস বন্যা এবং অতিবৃষ্টির পানিতে চর কাদিরার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পানিতে বাড়িঘর ডুবে গেছে। রান্নার ব্যবস্থা নেই, খাবার নেই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই। খাবার পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। ত্রাণ বা সহযোগিতার কিছু খাবার থাকলেও বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই। বিশুদ্ধ পানি সংকটে ভুগছে পানিবন্দি মানুষ। কিছু পানির টিউবওয়েল থাকলেও পানি থাকায় বিশুদ্ধ পানি নেওয়া যাচ্ছে না। পানির জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের বলেন, বন্যার পানি বাড়িঘর থেকে নামছে না। এতে পানি দূষিত হচ্ছে। মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে প্রতিনিয়ত ২৫০-৩০০ রোগী ভিড় করছে। বেশিরভাগ রোগী পানিবাহিত চর্ম, অ্যালার্জি ও চুলকানিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, বন্যার পানিতে ভুগছে প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ। মানুষ বন্যার পানিতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগ নির্ণয়ে তাদের বিভিন্ন মেডিকেল টিমে কাজ করছে। তবে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। পানিবাহিত রোগে ডায়রিয়া, চর্মরোগ বেশি দেখা দিচ্ছে। মানুষকে সব দিক দিয়ে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।
মন্তব্য করুন