ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়ায় মসজিদের জায়গার ওপর ১৪৪ ধারা জারি ও শ্রমিক লীগ নেতা কর্তৃক মসজিদ ও মাদ্রাসার জমি দখলের প্রতিবাদে মসজিদ রেখে উন্মুক্ত রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করেছেন এলাকাবাসী।
নামাজের আগে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে মুসল্লিগণ অবৈধভাবে দখলকৃত মাদ্রাসা ও মসজিদের জায়গায় দ্বিতল ভবন নির্মাণ ও ইজিবাইকের গ্যারেজ উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি করেন।
মুসল্লিরা ও মসজিদের সাবেক সেক্রেটারি বাকী বিল্লাহ বলেন, ঝিনাইদহ শহরের হামদহ মৌজার আদর্শপাড়ায় ১২৮, ১২৯, ১৩২ ও ১৩৩নং দাগে সর্বমোট ২৩ শতাংশ জমির ওপর নিঃসন্তান দম্পতি হাজি আফসার উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীসহ বসবাস করতেন। সে সময় তার একতলা ভবনের বারান্দায় এক ভিক্ষুক তার সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। এক সময় ওই ভিক্ষুকের মৃত্যু হলে তার সন্তান হায়দার ও তার বোন সেখানে থেকে যায়।
তিনি বলেন, একপর্যায়ে হায়দার আলী বড় হলে হাজি আফসার উদ্দিনের কাছে জমি দাবি করে কিন্তু আফসার উদ্দিন তাকে জমি দিতে অস্বীকার করলে সে জোরপূর্বক জমির দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। হাজি আফসার উদ্দিন তার ২৩ শতাংশ জমি আদর্শপাড়া কচাতলা মসজিদ ও মাদ্রাসার নামে দান করে দেন। পরে ওই মসজিদটি সৌদি সরকারের অনুদানে ১৯৯০ সালের দিকে আধুনিক মসজিদে রূপান্তর করা হয় এবং আবু দাউদ নামকরণ করা হয়। মাদ্রাসাটিকে নুরানী মাদ্রাসা হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়।
পরে হায়দার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কাঙ্গালি হায়দার নাম নিয়ে আদর্শ পাড়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং পৌর শ্রমিক লীগের নেতা বনে যান। এ অবস্থায় ২০১৭ সালের দিকে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি বাকী বিল্লাহর কাছ থেকে অবৈধভাবে জোরপূর্বক ৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। পরে সেখানে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। এ ছাড়া হায়দার মাদ্রাসার কিছু জায়গা দখল করে জোরপূর্বক ইজিবাইক গ্যারেজ স্থাপন করে। যেখানে ওই গ্যারেজ বাবদ মাদ্রাসায় মাসে ১ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো দিন এক টাকাও ভাড়া দেননি।
সম্প্রতি হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে মুসল্লিগণ মসজিদ-মাদ্রাসার জমি দখলমুক্ত করার জন্য মসজিদে কয়েকটি সভা-সমাবেশ করে দখলদার উচ্ছেদের সিদ্দান্ত গ্রহণ করে। এ অবস্থায় হায়দার আলীর ছেলের বৌ তন্নি খাতুনের মাধ্যমে আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে এবং জমিটি মসজিদ-মাদ্রাসার ওয়াকফ সম্পত্তি এই বিষয়টিও চেপে গিয়ে একটা মামলা দায়ের করে ১৪৪ ধারা জারি করে। তারই প্রতিবাদে শুক্রবার মসজিদের মুসল্লিরা উন্মুক্ত রাস্তায় নামাজ আদায় করেন।
মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা অতি কষ্ট করে মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু সন্ত্রাসী হায়দার জোরপূর্বক জমি লিখে নিয়েছে।
মসজিদের সাবেক সেক্রেটারি আহসান হাবিব রনক বলেন, দেশ থেকে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে। তাই আমরা মসজিদ-মাদ্রাসারও সংস্কার চাই।
এ বিষয়ে মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটির (২০১৬-২০১৭ সালের) সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকি বিল্লাহ বলেন, ঝিনাইদহ থানার একজন এসআই আমাকে জানান কোর্টের আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ওই মসজিদের জায়গায় কোনো হট্টগোল করা যাবে না।
শ্রমিক লীগ নেতা পরিচয় দেওয়া হায়দারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন