ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘হাতুড়ি দিয়ে পিডাইছে সর্বাঙ্গে, আমার বাবারে শেষ কইর‍্যা দিছে’

নিহত উবায়দুল হক। ছবি : কালবেলা
নিহত উবায়দুল হক। ছবি : কালবেলা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়া একটি কোম্পানির গাড়িচালক উবায়দুল হকের শরীর হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়। ভেঙে দেওয়া হয় হাত। হাতুড়ির আঘাতে দেবে যায় মাথা, পায়ের তালুতে ঘাই দেওয়া হয়, কোপ দিয়ে কেটে দেওয়া হয় পায়ের গোড়ালি, থেঁতলে দেওয়া হয় হাতের নখ। নৃশংসভাবে আহত করা হয় উবায়দুল হককে। ৮ দিন আইসিইউতে অচেতন অবস্থায় পড়ে থেকে মারা যান। গত ১৪ আগস্ট গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তার মরদেহ।

উবায়দুল হকের (২৮) বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের দত্তগ্রাম গ্রামে। উবায়দুল ওই গ্রামের মৃত নেজামুল হকের ছেলে।

অভাবের সংসারে ১২ বছর ধরে ঢাকায় থেকে বিভিন্ন কাজ করতেন তিনি। উবায়দুল হক দুই বছর আগে বিয়ে করে স্ত্রী জাহেরা খাতুনকে নিয়ে উত্তর বেগুনবাড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। দারাজ কোম্পানিতে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করতেন। পাশাপাশি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ২৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

স্বজনরা জানিয়েছেন, গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে যোগ দিতে সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হন উবায়দুল। ফেরার পথে বিকেল ৪টায় পল্টন এলাকার নাইটিঙ্গেল মোড়ের স্কাউট ভবনের সামনে হামলার শিকার হন তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা কাকরাইলের একটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেন। ৫ আগস্ট ভোরে সে হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। পরে রাতেই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

সেখানে আইসিইউতে নেওয়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি উবায়দুলের। ১২ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ১৪ আগস্ট সকালে দাফন করা হয় উবায়দুলের লাশ। মা মরিয়ম বেগম কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনে ছেলেকে বাইরে যেতে বারবার নিষেধ করেছিলাম। আমাকে বলত, আম্মা তুমি চিন্তা কইরো না। হাতুড়ি দিয়ে পিডাইছে সর্বাঙ্গে, আমার বাবারে শেষ কইর‍্যা দিছে। উবায়দুল দুই বছর আগে বিয়ে করেন জাটিয়া ইউনিয়নের পাইস্কা গ্রামের আফাজ উদ্দিনের মেয়ে জাহেরা খাতুকে। স্ত্রী দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মোবাইল ফোনে জাহেরা খাতুন কালবেলাকে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়িতে থাকতে দিল না।

জামায়াতে ইসলামী ৩০ আগস্ট আমাদের পরিবারকে ২ লাখ টাকা অনুদান দেয়। এর মধ্যে এক লাখ টাকা আমার হাতে এবং এক লাখ টাকা আমার শাশুড়ির হাতে দেয়। টাকা আমার হাতে কেন দেওয়া হলো, এ কারণে পরদিন আমার পরিবারকে খবর পাঠিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে স্বামীর কোনো স্মৃতি আনতে দেওয়া হয়নি।

ভাইয়ের স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া সম্পর্কে এমদাদুল হক কালবেলাকে বলেন, বাবার বাড়ির লোকজন এসে জোর করেই নিয়ে গেছে। আমরা পাঠাতে চাইনি। এর সঙ্গে টাকার কোনো সম্পর্ক নেই।

যুবদল নেতা উবায়দুল হক হত্যার ঘটনায় বড় ভাই এমদাদুল হক বাদী হয়ে ২০ আগস্ট পল্টন মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫ জনকে আসামি করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধার-দেনা করে আলু চাষ, লাভের বদলে কাঁধে ঋণের চাপ

যে শঙ্কায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন টিউলিপ

তিন কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ৫

দাবানলে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে

সরাইলে বিএনপির নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল

মানিকগঞ্জে নিজ বাড়িতে নারীকে গলা কেটে হত্যা 

ভৈরবে আ.লীগ কার্যালয় থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

আন্দোলন-ধর্মঘটে ‘কার্যত অচল’ রাবি, ব্যাহত শিক্ষার পরিবেশ

রাজবাড়ীতে জমি বন্ধক নিয়ে গাঁজা চাষ, চাষি আটক

টিউলিপের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ তদন্ত প্রতিবেদনে যা ছিল

১০

নারী উদ্যোক্তা তনির স্বামী মারা গেছেন

১১

ভারত থেকে এলো ২৪৫০ টন চাল

১২

নারায়ণগঞ্জে আগুনে পুড়ল দুই কারখানা

১৩

উপসচিব বিতর্ক এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের বাস্তবতা 

১৪

কিশোরগঞ্জে হাসপাতালে ভুল ইনজেকশনে ২ রোগীর মৃত্যু

১৫

আবারও আসছে শৈত্যপ্রবাহ

১৬

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী মালদ্বীপের পাসপোর্ট

১৭

কুয়াশা ও তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নতুন বার্তা

১৮

দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন দাবানলকে ভয়াবহ করছে আরও

১৯

ধুম ৪-এ রণবীর

২০
X