‘ইটও ঘুষ নেন পবার ইউএনও’ শিরোনামে দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরই রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতকে বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ফয়সাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ইউএনও হিসেবে বদলি করা হয়।
প্রায় এক বছর আগে পবার ইউএনও হিসেবে যোগ দেন আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে গত জুন মাসে পবার কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ছাড়াই ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন তিনি। নওগাঁর আত্রাই থেকে নিজের চাচাতো ভাই রাজীব রনককে এনে তাকে দিয়েই কাজটি করাচ্ছিলেন তিনি। রাজীব রনক পবায় ইউএনওর সরকারি বাসভবনেই থাকতেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি ঘর নির্মাণে ইটভাটা থেকে ঘুষ নেওয়ারও অভিযোগ আছে ইউএনওর বিরুদ্ধে। পবার হরিয়ানে পুকুর কাটতে দেওয়ার বিনিময়ে ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে ওই ইট ঘুষ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব নিয়ে কালবেলায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে এ নিয়ে রাজশাহীতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর বৃহস্পতিবারই ইউএনওকে পবা থেকে বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
পবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবায় ঘুষের চুক্তি করে পুকুর খনন করতে দিতেন ইউএনও। কোথাও পুকুর খননের কথা শুনলে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের ফোন করে দেখা করতে বলতেন। চেয়ারম্যানেরা পুকুর খননকারীর সঙ্গে মধ্যস্থতা করে টাকা এনে দিতেন। বিঘা প্রতি চুক্তি হতো ২০ হাজার টাকা।
সম্প্রতি এক ইউপি চেয়ারম্যানের অফিসে গিয়ে তার কাছ থেকে পুকুর খননের ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে ইউএনওর বিরুদ্ধে। গত এক বছরে পবায় অন্তত ২০০ পুকুর কাটা হয়েছে। প্রতিটি পুকুরের আয়তন ১০ বিঘা থেকে ৪০ বিঘা পর্যন্ত। আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমিতে এসব পুকুর খনন করতে গিয়ে কোটি টাকা কামাইয়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পবার খড়খড়ি হাটের ইজারা বাতিল করেন ইউএনও। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে ভূমি অফিসের তহশিলদার খাস আদায় করবেন। কিন্তু খাস আদায় করছেন পারিলার ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদের লোকজন। হাটটিতে সব খরচ বাদ দিয়েও রোজ অন্তত ৫০ হাজার টাকা আদায় হয়। আদায় করা টাকার বড় অংশ ইউএনও এবং চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, ইউএনও হাসনাতের সব অনিয়মের সঙ্গী অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক সাদ্দাম হোসেন। সম্প্রতি এই সাদ্দামকে অন্য উপজেলায় বদলি করা হয়। এর পরেও সাদ্দামকে সন্ধ্যার পর অফিসে এনে কাজ করাতেন ইউএনও। সরকারি গাড়ির অপব্যবহার এবং উপজেলা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ছিল ইউএনও হাসনাতের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে বৃহস্পতিবার ইউএনও আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতকে তার মোবাইল ফোনে কয়েকদফা কল করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। আগের দিন বুধবার তিনি চাচাতো ভাইকে দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ করানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তবে কৌশলে কথা বললে তা স্বীকার করেছিলেন ইউএনওর চাচাতো ভাই রাজীব রনক।
মন্তব্য করুন