ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে গত ৫ আগস্ট পতন হয় দীর্ঘদিন ধরে শাসন করে আসা আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রায় ১৬ বছর এককভাবে ক্ষমতায় থাকার প্রভাবে বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের থেকে ইচ্ছেমতো চাঁদা নিতেন তৎকালীন স্থানীয় নেতারা।
কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরও মুক্তি মেলেনি ব্যবসায়ীদের। এখনো তাদের চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। তবে পূর্বের তুলনায় চাঁদার পরিমাণ কিছুটা কমলেও কোনো বাজারে নেই সিটি চার্ট। বরিশালের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন নগরীর চৌমাথা বাজারে গিয়ে জানা যায়, খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে দৈনিক ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হতো মুরগি ব্যবসায়ীদের। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে দৈনিক ১৫০ টাকা করে চাঁদা দিচ্ছেন তারা। এ ছাড়া সবজির দোকান থেকে ১০০, মাংসের দোকান থেকে ৭০, ডিম-পান ও ফলের দোকান থেকে ৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে চাঁদা। অন্যদিকে খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে মাছ ব্যবসায়ীদের দৈনিক চাঁদা দিতে হতো শতকরা ৫ টাকা। কিন্তু সরকার পতনের পর তাদের শতকরা ৩ টাকা করে দিতে হচ্ছে চাঁদা।
তবে এই চাঁদা তাদের কাছে ইজারা বা খাজনা নামেই তোলা হয়। বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তথ্যমতে, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১৭টি হাট-বাজার রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি হাট-বাজারের ইজারা রয়েছে। সরকার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বৈঠক করে নগরীর নতুন বাজার, বাংলা বাজার ও সাগরদি বাজারের ইজারা মুক্ত করেন। ফলে এই তিন বাজারের ব্যবসায়ীদের কোনো ইজারা দিতে হয় না।
বরিশাল নগরীর কোনো হাট-বাজারে নেই ইজারাকৃত মূল্য তালিকার সিটি চার্ট। ফলে নিজেদের ইচ্ছেমতো মূল্য নিচ্ছেন ইজারাদাররা। প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। আর বাড়তি মূল্যের চাপ পড়ছে ক্রেতাদের ওপর। সিটি করপোরেশন হাট-বাজারের ইজারা দিচ্ছেন। কিন্তু তারা মূল্য তালিকা (সিটি চার্ট) প্রস্তুত করে না দেওয়ায় দোকানপাট থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছেন ইজারদাররা।
ব্যবসায়ীরা জানান, টোকেন (রশিদ) ছাড়াই খাজনা উত্তোলন করেন ইজারাদাররা। ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে এই বাজারে কোনো সিটি চার্ট নেই। ফলে যতখুশি তত টাকা নেন ইজারাদাররা। আর ব্যবসায়ীরা জানেন না, তারা বেশি, না কম দিচ্ছেন ইজারা।
মুরগি ব্যবসায়ী শামীম হাওলাদার বলেন, চৌমাথা বাজার জমে ওঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সিটি চার্ট দেখিনি। ফলে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন ইজারাদাররা। অন্য এক ব্যবসায়ী খোকন বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বছর ব্যবসা করছি। কিন্তু সিটি চার্ট দেখানো হচ্ছে না। যেটি প্রতিটি বাজারে সিটি করপোরেশনের লোকদের টানিয়ে দেওয়ার কথা। সবজি বিক্রেতা জাকির বলেন, খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র থাকাকালে দৈনিক ১৫০ টাকা খাজনা নিত, আর এখন নেয় ১০০ টাকা। সিটি চার্ট অনুযায়ী কম নিচ্ছে না বেশি নিচ্ছে তা আমরা বলতে পারি না। তারা চৌমাথা বাজারসহ নগরীর প্রতিটি বাজারে সিটি চার্ট স্থাপনের দাবি জানান।
এদিকে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড, কাশিপুর, চরকাউয়া খেয়াঘাট, নথুল্লাবাদ, রূপাতলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃক কোনো চার্ট স্থাপন করা হয়নি। ফলে অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছেন ইজারাদাররা। এভাবে যুগের পর যুগ চলে আসছে বলে জানান বাজারের ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে চৌমাথা বাজারের ইজারাদার সবুজ ও কাউন্সিলর পলাশ জানান, ইজারাপ্রাপ্ত হওয়ার পর একটি সিটি চার্ট টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কে বা কারা তা তুলে ফেলেছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত কোনো খাজনা বা ইজারা নেওয়া হয় না।
বরিশাল নগরীর একটি বাজারেও সিটি চার্ট না থাকার কথা স্বীকার করে বরিশালে সিটি করপোরেশনের বাজার ও স্টল শাখার তত্ত্বাবধায়ক মু. নুরুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া আমরা কোনো বক্তব্য দিতে পারি না। বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আহসান সাগরদী বাজার, বাংলা বাজার ও নতুন বাজার ইজারা মুক্ত রয়েছে।
মন্তব্য করুন