বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, রাষ্ট্র গভীর সংকটের মধ্যে আছে। গত ১৬ বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। যতদিন না পর্যন্ত আমরা দুর্নীতি বন্ধ করতে পারছি ততদিন পর্যন্ত আমাদের সাবির্ক উন্নয়ন সম্ভব নয়। যেখানে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ঘুষ বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ঠিক সেখানেই ছাত্র-নাগরিক থেকে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধিতা করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বিগত সরকারের সময়ের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এখন মানুষের আস্থা নেই। মানুষের বিচারব্যবস্থা ও সংসদের ওপর কোনো আস্থা নেই। যতদিন না পর্যন্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের আস্থায় আসছে ততদিন পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজ শেষ হবে না।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে যখন নামাতে চাই তখনও আমরা দেখেছি সমাজের প্রতিটি শ্রেণিপেশার ছাত্র-নাগরিক এই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে। যখনই ভাঙনের প্রশ্ন এসেছে, টেনে নামানোর প্রশ্ন এসেছে, যখনই পতনের প্রশ্ন এসেছে তখনই সমাজের মানুষ এক হয়ে গেছে। আমাদের আন্দোলন এখনই শেষ হয়নি। রাষ্ট্র পূর্ণাঙ্গভাবে পুনর্গঠন না হওয়া পর্যন্ত একটি সংগ্রামের মধ্যে রয়েছি। যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র পূর্ণাঙ্গভাবে গঠন হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাসনাত আরও বলেন, যদি মনে করি অন্তর্বর্তী সরকার জনমুখী না হয়ে আবার ক্ষমতামুখী হচ্ছে তখনই প্রয়োজন হলে ছাত্র-নাগরিক অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে। আমরা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছি। হৃদয় তরুয়া, ওয়াসিম, সাঈদ যখন রক্ত দিয়েছে তারা পালার জন্য রক্ত দেয়নি, তারা বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছে, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সকলকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন ছোট ছোট গোষ্ঠী বিভিন্ন দাবিতে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে বিভিন্নভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। ১৬ বছরের আঘাত, ক্ষত, ঘা একমাসে কোনোভাবে পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ হওয়া সম্ভব না। আহতরা এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। শহীদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। প্রতিদিনিই শহীদের লিস্ট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
সরকারের স্থিতিশীলতা বিষয়ে এ সমন্বয়ক বলেন, একটি সরকার মাত্র গঠিত হয়েছে, স্থিতিশীল হয়নি। আপনারা যদি রাস্তায় নেমে আসেন তাহলে ধরে নিব আপনারা সরকারকে অসহযোগিতা করার জন্য রাস্তায় নেমে আসছেন। যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামো স্থিতিশীল পর্যায়ে না আসে ততদিন পর্যন্ত সবাইকে আহ্বান জানাব আপনারা রাস্তাঘাট দখল করে, প্রশাসন ঘেরাও করে আপনারা কোনো দাবি নিয়ে আসবেন না।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যেতে চায়। এ সংবাদ আমাদের আহত করে। যে কোয়ালিটির চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে চান, সেই কোয়ালিটির চিকিৎসা বাংলাদেশে নিশ্চিত করুন। আপনার সামর্থ্য আছে আপনি যেতে পারেন কিন্তু আমার জনগণের সেই আর্থিক ক্ষমতা নেই। যদি আপনি উপদেষ্টা হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যেতে চান সেখান থেকে এসে নৈতিক কোনো অবস্থান আপনার নেই। সাধারণ ছাত্র-জনতা যে ধরনের সেবা নিবে ঠিক একই ধরনের সেবা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতামুখী না হয়ে জনতামুখী হন। বেনজির কিংবা হারুনের মতো দেশ থেকে পালাতে হবে না।
পার্বত্য জেলা বান্দরবান সম্পর্কে বলতে গিয়ে অন্যতম এ সমন্বয়ক বলেন, বান্দরবানে কোনো আইসিইউ নেই। বান্দরবানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা নেই। ঢাকায় থেকে শিক্ষার্থী যে শিক্ষা পাচ্ছে সেই একই মানের শিক্ষা পাহাড়ে পৌঁছে দিতে হবে। ভৌগলিক এবং স্থানিক দূরত্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘুঁচিয়ে দেওয়া সম্ভব।
তিনি হাসনাত বলেন, পাহাড়ে পাহাড়ে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি অব্যহত রয়েছে। এই চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রীয়কাঠামোর অংশ। ফ্যাসিস্ট সরকারকে আমরা বাংলাদেশ থেকে বিতারিত করেছি। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ পূর্ণবাসনের যদি চিন্তা থাকে এই ছাত্র নাগরিক আপনাদের প্রতিহত করবে।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিসহ অন্য সফরসঙ্গী ও বান্দরবানের সাধারণ ছাত্রজনতা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন