ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়েও দিব্যি দোকান করছেন বাবা-ছেলে

দোকান করছেন বাবা-ছেলে। ছবি  : কালবেলা
দোকান করছেন বাবা-ছেলে। ছবি : কালবেলা

কানে শুনতে পান না, মুখে কথাও বলতে পারেন না। তবুও দিব্যি মুদির দোকান চালাচ্ছেন বাবা-ছেলে। বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়েও ক্রেতাদের ইশারা ও ঠোঁটের ভাষা বুঝে দোকান করছেন তারা। তাদের এমন প্রতিভায় বিস্মিত সব শ্রেণিপেশার মানুষ।

খরিদদার দোকানে আসছেন, স্বাভাবিক নিয়মে চা-নাস্তা খেয়ে চলে যাচ্ছেন। বিক্রেতাও স্বাচ্ছন্দ্যে সব কিছু পরিবেশন করছেন। দেখে বুঝার উপায় নেই দোকানি ও তার ছেলে কানে শুনতে পান না এবং মুখে কথা বলতেও পারেন না। ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা করছেন তারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমাপুর ইউনিয়নের ফকদনপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. হাবিব। জন্মগত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী তিনি। পৌরশহরের রোড সুগারমিল গেটের বিপরীতে বাবার মুদি দোকান। ছোটবেলা থেকে থাকতেন মুদি দোকানে। বাবা মারা যাওয়ার পরে নিজে শুরু করেন এ দোকান। বিয়ের পরে এক ছেলে ও মেয়ের বাবা হয়েছেন। ছেলে কানে শোনা কিংবা মুখে কথা বলতে পারে না। এ দিকে মেয়ে কানে শুনতে পেলেও কথা বলতে পারেন না। চার সদস্যের পরিবারের মধ্যে তিনজনই প্রতিবন্ধী।

জানা গেছে, সকালে বাড়ির কাজ শেষ করে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দোকানে আসেন তিনি। বাবা-ছেলের যোগসাজশে চলে বেচাকেনা। দোকানের প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে নিয়ে আসেন ছেলে। দোকান থেকে কেউ বাকী নিলে সেটিও লিখে রাখেন তারা।

রকি নামে এক বলেন, ইশারায় ক্রেতাদের ভাষা বুঝে ফেলেন বাবা-ছেলে। লাল চা, দুধ চা নাকি পান সবই বোঝেন ইশারায়। তাদের মতো অনেক প্রতিবন্ধী অন্যের কাছে হাত পেতে চললেও তারা হয়ে উঠেছে অনন্য উদাহরণ।

আরেক ক্রেতা রফিকুল বলেন, বাবা-ছেলের ব্যবহার অনেক ভালো। কারো কথায় বিরক্ত হয় না বা রাগ করে না। আমরা এখানে ওদের সঙ্গে একটু মজা করার জন্যই চা খেতে আসি। তারা দুজনে এমন অক্ষম হওয়ার পরেও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এখন সকলে যদি তাদের একটু সহযোগিতা করে তাহলে তার দুই সন্তানের পড়াশোনা ভালোভাবে হবে।

হাবিবের প্রতিবেশী মনোয়ারা বলেন, তাদের পরিবারে অনেক অভাব। একটা ছোট্ট দোকান করে চলতে হয় তাদের। ছেলে, মেয়ে, বাবা তিনজনেই প্রতিবন্ধী। মেয়েটা ছোট চিকিৎসা করলে হয়তো ভালো হবে। সরকার যদি এ পরিবারের পাশে দাঁড়ায় তাহলে পরিবারটা ভালোভাবে চলতে পারে।

হাবিবের স্ত্রী আফরোজা আক্তার বলেন, ১১ বছর আগে হাবিবের সঙ্গে বিয়ে হয় আমার। স্বামীর মতোই দুই সন্তানও কথা বলতে পারেন না। ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে তাদের সঙ্গে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। স্বামী ও ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা হলেও মেয়ের হয়নি এখনো।

তিনি বলেন, মেয়েটা বড় হলে বিয়ে দিতে হবে। তাই চিকিৎসা করাতে চাচ্ছি, যদি কিছুটা হলেও ভালো হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকার ও বিত্তবানরা আমাদের পাশে দাঁড়ালে বাচ্চাটার চিকিৎসা করা পারতাম।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সারোয়ার মুর্শিদ আহমেদ বলেন, হাবিবের পরিবারকে ক্ষুদ্র ঋণ সহয়তা দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া তার মেয়ের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। পরিবারটির পাশে থাকবে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ডিএমপির ২ থানায় নতুন ওসিসহ ৭ পুলিশ পরিদর্শকের পদায়ন

১৮ সেপ্টেম্বর : নামাজের সময়সূচি

এমবাপ্পে-এনড্রিকে ভর করে রিয়ালের জয় 

মহাসড়ক অবরোধ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিক্ষোভ

সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ গ্রেপ্তার

বড় জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরু মার্তিনেজের ভিলার

শিক্ষায় ৩১ বছরের বৈষম্যের অবসান চান মাউশির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

১২ জেলারসহ ৩৪ কারা কর্মকর্তাকে বদলি

ডিএমপির ৮ কর্মকর্তাকে বদলি

১০

মাজার ভাঙার প্রতিবাদে হরিরামপুরে সমাবেশ

১১

ভারতবিরোধী পোস্ট শেয়ার করায় বিএনপি নেতার ভিসা বাতিল

১২

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান মো. শাহজাহানের

১৩

সাড়ে ১০ কেজি স্বর্ণালংকারসহ মিয়ানমারের ২ নাগরিক আটক

১৪

অপহৃত ইউপি চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

১৫

আবাসিক হলের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঢাবি উপাচার্যের মতবিনিময়

১৬

বরিশাল মেট্রোপলিটনে চার থানায় নতুন ওসির যোগদান

১৭

পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ / পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৮

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

১৯

‘১০ হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে খুন করেছে আ.লীগ’

২০
X