ফেনী জেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের সোনাপুর ও মধ্য কাজিরবাগ গ্রামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৪৫টি পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শনিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) ‘হৃদয়ে ৮৮’ এবং ‘চ্যানেল হৃদয়ে ৮৮’-এর যৌথ আয়োজনে প্রতিটি পরিবারকে ২০০০ টাকা করে নগদ অর্থ দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও ৫০টি পরিবারকে এনএফআই (Non-Food Items) নিটক হস্তান্তর করা হয়, যা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী হিসেবে বিবেচ্য হয়েছে। এই উদ্যোগটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছিল।
এটা ছিল একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা যেখানে দেশে-বিদেশে ‘হৃদয়ে ৮৮’র বিভিন্ন সদস্যরা এই কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ জোগানের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়াও স্থানীয় কাজিরবাগ ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা, সোনাপুর জামে মসজিদ মাদ্রাসার নেত্রী বর্গ এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা সক্রিয় সহযোগিতা করেছে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া কাজটি বেশ দুরূহ হয়ে যেত। এই কাজটি করার ক্ষেত্রে শুরু থেকে বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। বিভিন্ন সংস্থা ও পত্রিকার সংবাদের ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক সিচুয়েশন রিপোর্ট তৈরি করা হয়। যা পরবর্তীতে ওই কর্মকাণ্ড করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ‘হৃদয়ে ৮৮’ বিভিন্ন টিমে বিভক্ত হয়ে মাঠপর্যায়ে সরেজমিনে খানা পরিদর্শন পূর্বক বেনিফিশিয়ারি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। যার ভিত্তিতে আইডি কার্ড এবং মাস্টারবো প্রস্তুত করে স্থানীয় হোল্ডার কমিটির সহায়তায় সোনাপুর জামে মসজিদ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দুটি বুথের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি খানায় নারীদের নাম রেজিস্ট্রেশন করা হয়, কিন্তু অসুস্থ বা সমস্যায় থাকা নারীদের ক্ষেত্রে তার নমিনি হিসেবে স্বামী কিংবা সন্তানদের ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা লাইন তৈরি করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি রেজিস্ট্রেশন কার্ডের তথ্য অনুযায়ী মাস্টার রোলে নিবন্ধনের মাধ্যমে স্বাক্ষর কিংবা টিপসই সহকারে তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা।
‘হৃদয়ে ৮৮’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়াতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে দারুণ প্রশংসা অর্জন করেছে। ত্রাণ ও নগদ অর্থ গ্রহণ করতে আসা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জানান বন্যার শুরুর দিকে একটি সংস্থা তাদের শুকনো খাবার সংগ্রহ করে। কিন্তু এরপরে ‘হৃদয়ে ৮৮’ সংগঠনের নগদ অর্থ প্রদান পদক্ষেপকে তারা ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ত্রাণ বিতরণের সময় বক্তারা উল্লেখ করেন, এই ধরনের মানবিক উদ্যোগ দুর্যোগগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতি দায়িত্ব পালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। তারা বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এই সহায়তা সাময়িক হলেও তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে সহায়ক হবে। এ ছাড়াও বক্তারা বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন ও সহায়তার জন্য সবাইকে আরও সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। বন্যার তীব্রতা কাটিয়ে উঠতে এই ধরনের অর্থ সহায়তা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক প্রমাণিত হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
‘হৃদয়ে ৮৮’ এবং ‘চ্যানেল হৃদয়ে ৮৮’-এর উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতে দেশের যে কোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয়। স্থানীয় মানুষদের এই ধরনের সহায়তা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তারা জানান, এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতেও তাদের দুর্দশা লাঘবের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির সময় উপস্থিত ছিলেন ২ নম্বর কাজিরবাগ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ওমর ফারুক পিন্টু, ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক নাসির উদ্দিন (রুমন হাজারী) স্থানীয় প্রতিনিধি, শামীম হোসেন, হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুর রহিম প্রিন্সিপাল, জামিয়াতুশ শহীদ মাদ্রাসা সোনাপুর, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, স্থানীয় প্রতিনিধি মধ্যম সোনাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। ফকিরহাট, কাজিরবাগ ফেনী সদর ফেনী।
এ ছাড়াও ‘হৃদয়ে ৮৮’ এবং ‘চ্যানেল হৃদয়ে ৮৮’-এর নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে ডা. সাগর খান, সুচিত্রা মিলি, জুয়েল হাজারী, লুৎফুল হক সোয়েব, মারিয়া রোজারিও দিপালী, অধ্যাপক নার্গিস আফরোজ, সাহেদ সোহেল চৌধুরী, হান্নান সাগর, খিজির আলম, ইফতেখার শাহেদ, মীর দীপন ও আনারুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন