ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী খুলনার পাইকগাছায় আওয়ামী শ্রমিক লীগ নেতার শিববাটী ব্রিজের বন্ধ হয়ে যাওয়া টোল আবারও চালু করা হয়েছে। এক মাস না পেরুতেই কে বা কার নেতৃত্বে মধ্য রাতে হঠাৎ চালু হলো এই টোল আদায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা ব্যক্তির ইজারাধীন বন্ধ থাকা টোলের কার্যক্রম চালু করায় এলাকায় দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। টোল চালু করায় সহায়তাকারী হিসেবে মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে বিএনপির কয়েক নেতার নাম।
প্রসঙ্গত,গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ও খুলনা সিটি করপোরেশন ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আকবর টিপুর ইজারায় খুলনার কয়রা-পাইকগাছা সড়কের শিববাটি ও চাঁদআলী সেতুর টোল আদায় গত ৮ আগস্ট থেকে বন্ধ করে দেয় ছাত্র-জনতা।
টোল বন্ধ হওয়ার পর এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করতে থাকে। পূরণ হয় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র এক বছরের মাথায় দক্ষিণ জনপথের অন্যতম প্রধান দুটি ব্রিজে বসানো হয় টোল। এই টোল বসানোর মধ্য দিয়ে সাধারণ জনগণের উপরে নেমে আসে খড়গ। কিন্তু দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকার কারণে জনগণ চাইলেও টোল থেকে অবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ফলে গত ১৩ বছর একটানা এই সেতুতে টোল আদায় করে যাচ্ছে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সম্পাদক ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (বর্তমানে পলাতক) আলী আকবর টিপুর প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলী আকবর এন্টারপ্রাইজ।
তবে টিপু ইজারা ডাক নিলেও পাইকগাছা-কয়রায় অবস্থিত চাঁদ আলী ও শিববাটি ব্রিজের টোল সাব ইজারাদার হিসেবে পরিচালনা করত পাইকগাছা পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি আনারুল ইসলাম আনার ও তার আরেক সহযোগী মামাশ্বশুর মিনারুল ইসলাম।
সরাসরি আলী আকবর এন্টারপ্রাইজ টোল নিয়ন্ত্রণ না করায় ভায়া মাধ্যমে টোল পরিচালিত হওয়ার ফলে সরকারি বিধি মোতাবেক ধার্য অর্থের থেকে দ্বিগুণ অর্থ আদায় করা হতো, যা নিয়ে এর আগে কয়েক দফা সাধারণ শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে টোল আদায়কারীরা।
ইতোমধ্যে আনারুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। অথচ ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের রক্তের দাগ শুকিয়ে যাওয়ার আগেই আনারুল ওরফে টোল আনার আবারও ফিরে এসেছেন স্বরূপে। অবশ্য এক্ষেত্রে টোল আনারকে সেল্টার দিয়ে এলাকায় ফিরিয়ে আনা থানা পুলিশের গ্রেপ্তার থেকে মুক্ত রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য করার পরিবেশ করতে কয়েকজন বিএনপি নেতা তার পিছনের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষ এক সূত্র জানান, দুই দিন আগে গভীর রাতে পাইকগাছার বিশিষ্ট এক ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে টোল আনারের সঙ্গে দুই-তিনজন বিএনপি নেতা মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের মধ্য দিয়ে রফাদফা করে নিয়েছেন। সব লেনদেন মিটিয়ে একদিন পর ৮ সেপ্টেম্বর মধ্য রাত থেকে ফের টোল আদায় শুরু করে।
টোল আদায়ের বিষয়ে আনারুলের মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অপর সহযোগী মিনারুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, আমাদের এখনো ৯ মাস ১০ দিন সড়ক ও জনপথ বিভাগের চুক্তি আছে। সে কারণে আমরা টোল আদায় শুরু করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীনের বক্তব্য জানতে কয়েকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন