বরগুনার সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন অর রশিদকে মারধরের পর এবার ফেসবুক লাইভে এসে তাকে ডাকাত-ধর্ষক বললেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফারুক মোল্লার ছেলে শাওন মোল্লা।
রোববার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে শাওন মোল্লা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বয়স্ক একজন মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি আমার। তবে, আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করিনি এবং কোনো ভদ্রলোকের সঙ্গেও বেয়াদবি করিনি।
৫ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ফেসবুক লাইভের ভিডিওতে শাওন মোল্লা বলেন, আমার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এটি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনায় মূল বিষয়টি তুলে ধরতে লাইভে এসেছি। তথাকথিত কমান্ডার রশিদ ওরফে কালা রশিদ, ওরফে ডাকাত রশিদ, ওরফে ধর্ষক রশিদের মুক্তিযুদ্ধে কোনো ভূমিকা ছিল না। উনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার হয়েছেন।
তিনি নিজেও টাকার বিনিময়ে যাকে-তাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। উনার অত্যাচারে বরগুনার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ এবং সঠিক মুক্তিযোদ্ধারা লাঞ্ছিত-বঞ্চিত। উনি ডাকাত সর্দার, ভূমিখেকো, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ও ভিডিও ফুটেজ আছে। সেগুলো আমি পরবর্তীতে আপনাদের সামনে তুলে ধরব এবং আইনের আশ্রয় নেব।
এ সময় নিজেকে বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী দাবি করে শাওন মোল্লা বলেন, আমি কেন আইন হাতে তুলে নিলাম? কেন আমি এমন আচরণ করলাম? তার উত্তর আমি আপনাদের দিচ্ছি। আমি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করি এবং বিএনপির একজন ক্ষুদ্র কর্মী। এই ভুয়া রশিদ দম্ভ ভরে প্রকাশ করে আমার মাতৃতুল্য নেত্রীর চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন সময়।
জিয়াউর রহমানকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা না বরং একজন পাকিস্তানি গুপ্তচর বলে অপমান করেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি এসব বলেছেন।
তিনি তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে বলেছেন, তাদের নাকি জন্মের ঠিক নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমি আমার নিজেকে একজন জিয়ার সৈনিক হিসেবে কন্ট্রোল করতে পারিনি। তাই আজকে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় শাওন মোল্লা রশিদের কর্মমকাণ্ড দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্ত করে দেখতে বলেন। এ ছাড়া এসব মিথ্যা হলে আইনে যে শাস্তি আছে তা তিনি মাথা পেতে নেবেন বলে জানান। একজন কুখ্যাত ডাকাত ও নারী লিপ্সুর গায়ে হাত তোলা যদি অন্যায় হয়, তাহলে আমি প্রকাশ্যে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাই।
এর আগে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফারুক মোল্লার ছেলে শাওন মোল্লা ওই সাবেক কমান্ডারকে মারধর করেন।
মারধর করা ও ফেসবুক লাইভের বিষয়ে শাওন মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, অনেকেই ডাকাত রশিদকে না চিনে তার লেবাস দেখে পক্ষ নিয়েছেন। উনি খারাপ মানুষ। সমাজের খারাপ মানুষকে প্রতিহত করা একজন নাগরিকের দায়িত্ব।
এ বিষয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন অর রশিদ কালবেলাকে বলেন, আমাকে মারধর করার পর সবাই যখন আমার পক্ষে ছিল তাই আবার ফেসবুক লাইভে এসে আমাকে ডাকাত বলেছে। আমি এ বিষয়েও মামলা করব। তবে, একটু সময় নিচ্ছি, আমার মানসিক অবস্থা ভালো না।
বরগুনা সদর থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন