হবিগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সালেহ আহমেদ ৩৩ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। মৃত্যুর কোল থেকে ফিরলেও এখনো তার শরীরে বুলেট রয়েছে। সে যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন বিএনপি নেতা সালেহ।
প্রথম দিকে চিকিৎসকরা তাকে নিয়ে আশা ছেড়ে দিলেও এখন কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। তবে শরীরে এখনো বুলেট থাকায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে সুচিকিৎসার পাশাপাশি পরিবার নিয়ে দিশাহারা সালেহের স্ত্রী-সন্তানরা।
জানা যায়, গত ৪ জুলাই হবিগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন সালেহ। প্রথম দিকে তাকে সবাই মৃত বলে ধারণা করলেও শ্বাস নিতে দেখেন কয়েকজন ছাত্র। পরে দ্রুত তাকে সিলেটের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরে থাকতে হয়েছে অনেক দিন। তবে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তার সুচিকিৎসা হচ্ছে না। এখনো তার শরীরে বুলেট রয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, সুস্থ হলে অপারেশনের মাধ্যমে বুলেট শরীর থেকে বের করা হবে- এজন্য প্রয়োজন অর্থের।
আরও জানা যায়, গুলিবিদ্ধ সালেহ বিএনপির সক্রিয় কর্মী। ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির অর্থ সম্পাদক। বিএনপির প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বলে দাবি করছেন বিএনপির জেলা পর্যায়ের নেতারা।
গুলিবিদ্ধ সালেহ আহমেদের স্ত্রী হালিমা জানান, আমার স্বামী আজ ৩৩ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বুলেটের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এখনো গুলি পেটের নিচে রয়েছে। বের করতে সময় লাগবে বলে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন। তবে অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি জানান, আমার স্বামীর চিকিৎসায় অনেকেই সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। আমার সহায় সম্বল বিক্রি করে স্বামীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি। এখনো মূল অপারেশনটা করা হয়নি। কিছুটা সুস্থ হলে অপারেশন করে গুলি বের করা হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তার দুটি সন্তান মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছেন অনেক সময় ঠিকভাবে বেতন দিতে পারছে না তারপর আবার স্বামীর চিকিৎসা খরচ জোগাতে পারছেন না। কিভাবে তার স্বামীকে সুস্থ করে তুলবেন সে চিন্তায় দিন-রাত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সালেহ আহমেদের ১২ বছরের ছেলে তামজিদ আহমেদ জানায়, তার বাবার চিকিৎসার জন্য এখনো সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারি সহযোগিতা না পেলে চিকিৎসা করাতে পারবে না। আগের মতো তার বাবা সুস্থ অবস্থায় নতুন স্বাধীন দেশ দেখতে চায়। নিজেকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তার বাবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসা জরুরি।
গুলিবিদ্ধ সালেহ আহমেদ জানান, আমি বুলেটের যন্ত্রণায় এখনো বিছানায় কাতরাচ্ছি। পেটে এখনো বুলেট আছে। চিকিৎসকরা বলেছেন অপারেশন করে গুলি বের করতে হবে নতুবা ঝুঁকি রয়েছে। এ অবস্থায় আমি সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই। আমি সুস্থ হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আগের মতো করে বাঁচতে চাই।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিম বলেন, সালেহ আহমেদ একজন বিএনপির সক্রিয় কর্মী। আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আমরা তার চিকিৎসার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। পেট থেকে গুলি বের করতে হলে বড় অপারেশন করতে হবে- এজন্য অনেক সহযোগিতার প্রয়োজন। তিনি সবাইকে সালেহর চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।