নওগাঁয় মাহমুদুন নবী ও রবিউল ইসলাম নামের দুই সাংবাদিককে তুলে নিয়ে গিয়ে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। জেলার পত্নীতলায় অবৈধ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ও ভুল চিকিৎসার সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ওই দুই সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের মালিক, চিকিৎসক ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে এবং সাংবাদিকতা না করার প্রতিশ্রুতি লিখে নিয়েছে। এ ছাড়াও গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্যাতনের শিকার দৈনিক জয়পুরহাট বার্তার প্রতিনিধি মাহমুদুন নবী বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অপরজন দৈনিক মানবকন্ঠের প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম নিজ বাড়িতেই আছেন।
শনিবার রাতে তাদেরকে তুলে নিয়ে পত্নীতলা সিটি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ নির্যাতন চালানো হয়।
ঘটনার শিকার মাহমুদুন নবী জানান, শনিবার বিকেলে তিনি নজিপুর বাজারে সিটি ক্লিনিকের সামনে একটি দোকানে চা পান করছিলেন। এ সময় সিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক ও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার দেওয়ান সবুর হোসেন তাকে জোর করে ক্লিনিকের ভেতরে ধরে নিয়ে যায় এবং অতর্কিত মারপিট শুরু করে। ঘরে আটকে রেখে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে কয়েক দফায় তাকে মারপিট করা হয়।
একপর্যায়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সাংবাদিকতা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাহমুদুন নবীর কাছ থেকে একটি সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয় তারা। এ ছাড়া ফেসবুকে লাইভে সাংবাদিকতা না করার ঘোষণা এবং গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, অবৈধ ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিক ও ভুল চিকিৎসার সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তাররা চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্যাতন করেছে। এখন মামলা না করার হুমকি দিচ্ছে।
মানবকন্ঠের প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম জানান, একই দিন রাত ১০টার দিকে বাড়ির সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সিটি ক্লিনিকে। সেখানে একটি ঘরে আটক করে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের পর জোর করে সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্পে স্বক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে ক্লিনিক মালিকদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনায় চিকিৎসক ও ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক মালিক পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছেন। সিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, চিকিৎসকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের দ্বন্দ্ব হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কেউ জড়িত নয়।
চিকিৎসক দেওয়ান সবুর হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক মালিক পক্ষের লোকজন সাংবাদিকদের মারধর করেছে।
এ বিষয়ে পত্নীতলা থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিক মাহমুদুন নবী ও রবিউল ইসলামকে উদ্ধার করে আনা হয়েছিল। তবে তারা এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন