প্রলয়ংকরী বন্যায় কুমিল্লার পাঁচ উপজেলার শতাধিক ইটভাটার ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। জেলার লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও বুড়িচং উপজেলার এসব ইটভাটার বেশিরভাগই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে দাউদকান্দি, মেঘনা, হোমনা, তিতাস, ব্রাহ্মণপাড়া, চান্দিনা, মুরাদনগর উপজেলার ইটভাটাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।
বন্যার পানিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, বুড়িচং এবং মুরাদনগর উপজেলার ৭০ থেকে ৮০টির মতো ইটভাটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যার কারণে এসব ইটভাটায় ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় প্লাবিত হওয়াতে ইটভাটাগুলোর কিলনের দেওয়াল এবং জিগজ্যাগের পাইপ লাইন নষ্ট হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী প্রতিটি ইটভাটা মেরামতে ২০ থেকে ৩০ লাখ করে টাকা ব্যয় হবে বলে ধারণা করা যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত ইটভাটার মালিকরা জানান, হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ায় মেশিনপত্র, মূল্যবান দলিলাদি এমনকি ট্রাক-ট্রাক্টর-পিকআপ গাড়িগুলোও সরিয়ে নেওয়া যায়নি। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। কাজ না করিয়েও শ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে এখনো। মানবিক কারণে তাদের খাবার-দাবারেরও ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি কুমিল্লা জেলা সহসাংগঠনিক সম্পাদক, লাকসাম শাখার সভাপতি ও লাকসামের বাকই ব্রিকস ফিল্ডের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ফিল্ডের মোল্ডিং মেশিন, ট্রাক্টর, পিকআপ, এক্সক্যাভেটর ও ইঞ্জিন ডুবে ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। লাকসামের ছয়টি ব্রিকস ফিল্ডের প্রায় ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মেশিনগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে। বর্তমানে শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন ও খাবারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি চৌদ্দগ্রাম শাখার সভাপতি ও কুমিল্লা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রোটারিয়ান মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, আমার হাজেরা ব্রিকফিল্ডসহ উপজেলায় ৪০টি ব্রিকফিল্ডের প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মায়ের দোয়া ব্রিকস ফিল্ডের মালিক আবু ইউসুফ বলেন, উপজেলার ১৫টি ফিল্ডের অন্তত দেড় কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলার এশিয়া ব্রিকস ফিল্ডের মালিক কামাল হোসেন বলেন, উপজেলার চারটি ব্রিকস ফিল্ডের প্রায় ৬০ লাখ টাকার মেশিনপত্রের ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
বুড়িচং থানার ওসি আবুল হাসানাত খন্দকার জানান, এ উপজেলায় ২৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অতিমাত্রায় জলাবদ্ধতায় ভাটার কাঁচামালসহ মেশিনপত্রের ক্ষতি হয়েছে ১১টির। তিনটি ভাটার কাঁচামালসহ আনুষঙ্গিক ক্ষতি হয়েছে। ইটভাটার প্রতিটি মেশিনের মূল্য ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। সবমিলিয়ে আনুমানিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ লাখ টাকা।
দাউদকান্দি উপজেলায় পাঁচটি ইটভাটা বন্যার পানিতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরাফাতুল আলম।
তিতাস উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা সাতটি তবে তিনটি ইটভাটায় বন্যার পানি ঢুকেছে। এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার ওসি কাজী এনামুল হক।
মেঘনা উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা একটি। এবারের প্লাবনে এটির কোনোরূপ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন মেঘনা থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক।
হোমনায় একটি ইটভাটার কাঁচামালসহ মেশিনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষেমালিকা চাকমা।
কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই, বরুড়া, মুরাদনগরসহ এ উপজেলায় সর্বমোট ৫০টির ওপর ইটভাটা রয়েছে। এসব এলাকার বন্যার পানি কোনো ইটভাটার কাঁচামালসহ মেশিনের খুব একটা ক্ষতি হয়নি বলে ইটভাটার মালিকপক্ষ থেকে জানা গেছে। জেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় ৪টি, চান্দিনায় ১৭টি, দেবিদ্বারে ইটভাটা রয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে কাঁচামাল বা মেশিনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা। কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব কালবেলাকে বলেন, কুমিল্লায় বন্যাতে শতাধিক ইটভাটার অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী প্রতিটি ইটভাটা মেরামতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে। এ জেলায় ২৯১টি ইটভাটার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করছি। ভাটার মেশিনপত্র ছাড়াও কিলনের দেওয়াল ও পাইপ লাইন নষ্ট হয়েছে। এসব ভাটার প্রতিটির ক্ষেত্রে এ ধরনের মেরামত খরচ লাগবে। অন্যান্য ভাটার বেশিরভাগই আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি সম্পূর্ণরূপে নেমে গেলে ইটভাটাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্রুত কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।