খুলনার পাইকগাছায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কমিটি নেই। কোনো কমিটির প্রয়োজন নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা চাই রাষ্ট্রের সংস্কার। ছাত্ররা সব সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। টেন্ডার বা ব্যবসা বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা রাখতে আমরা দৃষ্টি রাখবো কিন্তু টেন্ডার বা ব্যবসা বাণিজ্য করা আমাদের কাজ নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি এমন কাজে নিজেকে জড়িত করলে বা করার চেষ্টা করলে সেটা হবে মারাত্মক অপরাধ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম জড়িয়ে পড়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাইকগাছা উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা এসব কথা বলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় দিয়ে আমাদের বিতর্কিত করতে কেউ কোনো প্রকার সুবিধা চাইলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নতুন এক স্বাধীনতার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। নবমুক্তি অর্জনের পর ছাত্ররা রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক কাজে হাত দেয়। বিশেষ করে স্বৈরাচারী হাসিনার পলায়নের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতার পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব সহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছিল। বিশেষ করে রাস্তা ঘাট পরিষ্কার-পরিছন্ন করার পাশাপাশি দেওয়াল লিখন, চিত্র অংকন খুবই দৃষ্টি নন্দন হয়ে ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা যখন চারদিকে দেশ ও সমাজ গড়ার কাজে ব্যস্ত তখনি কিছু ছাত্র আন্দোলনকারীদের বেশ ধারন করে প্রকৃত আন্দোলনকারীদের এই মহতি উদ্যোগকে ব্যাহত করার চক্রান্তের জাল বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি এমন অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সাপেক্ষ কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে পাইকগাছায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিভিন্ন অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করার অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। তবে লিখিত আকারে কোনো অভিযোগ না পাওয়া গেলেও মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
এবিষয়ে পাইকগাছা উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন অন্যতম শিক্ষার্থী খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থী রাহানুর রহমান হৃদয়ে সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, পাইকগাছায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কমিটি নেই। আর আমরা চাই না কোনো কমিটি হোক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে কেউ কোনো প্রকার অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজে অংশ চাই কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হৃদয় বলেন, আমরা সবাই ছাত্র, আমরা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সরকারি কোনো কাজে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই, আমরা চাই সততা ও স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে সব কাজ গুলো হোক। এক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণ প্রশ্ন আসে না, শুধু তাই নয় অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার জন্য কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ আমাদের জানাবেন, আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।
রাহানুর রহমান হৃদয় বলেন, আমরা চাই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও যথাযথ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে সকল কার্যক্রম গুলো বাস্তবায়িত হোক।
অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেকজন শিক্ষার্থী (খুলনা বিএল কলেজ) আব্দুল কাদের নয়নের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আন্দোলন চলাকালে আমরা এক থেকে দুইশ’ ছাত্র সক্রিয় ছিলাম, এখন অনুপ্রবেশ করে সেটার সংখ্যা সাত থেকে আট শত ছাড়িয়ে। আমরা চাই দেশ গড়তে, কোনো রাজনৈতিক দল বা অনুপ্রবেশ করা ব্যক্তি তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে আমাদেরকে ব্যবহার করুক তা আমরা হতে দেব না। সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা সুযোগ বা সুবিধা নিতে চাই তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য হতে পারে না। প্রমাণসহ উপস্থাপন করুন আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।