যশোর-নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার অপেক্ষা বাড়ছে। গত জুলাই মাসে এ রুটে ট্রেনে চলাচল করার কথা থাকলেও সেটা পিছিয়ে গেছে। কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল করবে তারও সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। তবে অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পদ্মার ওপর দিয়ে যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল করতে পারে বলে প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন আশা ব্যক্ত করেছেন।
খুলনা থেকে যশোর হয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্য সরাসরি রেলপথ রয়েছে। ঘোরা পথ হওয়ায় ট্রেনে ঢাকা যেতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। তবে পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করার স্বপ্ন দেখছেন বৃহত্তর যশোর-খুলনার মানুষ।
গত ৩০ ও ৩১ মার্চ দুই দিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল হয়। জুলাই মাসে রেলের এ রুটের উদ্বোধন করা হবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু জুলাই পার হয়ে আগস্ট শেষ হলেও ট্রেন চলাচলের খবর নেই। এর মধ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ায় অপেক্ষা বাড়ছে বলে মনে করছেন রেলের এ অঞ্চলের কর্মকর্তারা।
পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, জুলাইয়ে ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রুটে সোজা পথে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলবে। নতুন এ রেলপথ চালু হলে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে অন্তত ১৯৩ কিলোমিটার। যুক্ত হতে পারবে ট্রান্স-এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কে।
তিনি বলেন, ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে কিছু কাজ এখনো চলছে। এই কাজ শেষ হলে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এখন আর ফরমাল উদ্বোধন হবে না। অনানুষ্ঠনিকভাবে হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে বড় আয়োজন আর হবে না।
তিনি আরও বলেন, যদিও এখনো শিডিউল ঠিক করা হয়নি, তবে বর্তমানে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেসসহ ফরিদপুর হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে যে ট্রেনগুলো চলাচল করে সেই ট্রেনগুলো যশোর থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করবে। ধীরে ধীরে ট্রেন সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
জানা যায়, ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী ও যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়ায় থাকছে রেলওয়ে জংশন। এ ছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়ায় রয়েছে রেলস্টেশন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের সময় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক)। চীনের অর্থায়নে ওই দেশেরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলপথ নির্মাণের কাজটি করছে।
তিন অংশে ভাগ করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রথম অংশ ঢাকা-মাওয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। দ্বিতীয় অংশ মাওয়া-ভাঙ্গার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে এ অংশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
প্রকল্পের শেষ অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর। এই অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৩ কিলোমিটার। স্টেশনের সংখ্যা ১৪। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে।
নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর সংযোগ রেলপথে কী পরিমাণ যাত্রী ও মালামাল পরিবহন হতে পারে, তার একটি বিশ্লেষণ এরই মধ্যে তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ (সিআরইসি)। স্বল্পমেয়াদি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এই সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে এই প্রাক্কলন তৈরি করেছে সিআরইসি।
মন্তব্য করুন