স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের পোলট্রি, গরু ও ছাগল খামারিরা। মূলধন ও ঋণ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য ব্যবসা শুরু করলেও বন্যায় তাদের স্বপ্ন ভেঙে আজ তারা নিজস্ব। সবকিছু হারিয়ে দায়-দেনা পরিশোধে আজ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনেক খামারি।
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের বন্যায় উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে বেশিরভাগ পোলট্রি ফার্মের মোরগ পানিতে ভেসে মারা গেছে।
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ফালগুনকরা গ্রামের রিমি পোলট্রি ফার্মের মালিক মিজানুর রহমান (টিটু) কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, বন্যায় তার ৩০ হাজার মোরগ মারা গেছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এভাবে ঘরে পানি ঢুকে যাবে চিন্তাও করতে পারিনি।
ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এবং নিজের সহায়সম্বল দিয়ে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করেছিলাম। সব হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। ব্যাংকের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব, এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম।
আলকরা ইউনিয়নের নাঈমুল ইসলাম বলেন, আমার ফার্মের ২৪টি ছাগলের মধ্যে ২২টিই বন্যার পানিতে ভেসে মারা যায়। ব্যবসার মূলধন হারিয়ে আজ আমি দিশাহারা। উপজেলা চিওড়া নোয়াপুর গ্রামের আঁখি পোলট্রি ফার্মের মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত আট বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত, বন্যার পানিতে ৫০০০ লেয়ার মোরগ ভেসে যায়। অনেক টাকা ব্যাংক ঋণ, কী করে ব্যাংক ঋণ শোধ করব বুঝতে পারছি না একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
মিয়াবাজার আদর ডেইরি ফার্মের মালিক ইলিয়াস হোসেন বলেন, বন্যায় পানিতে আমার ৮টি বাছুর ও ৪টি ভেড়ার বাচ্চা ভেসে মারা যায় এবং ১ লাখ টাকার গরুর খাদ্য ভুসি, খইল পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। কুমিল্লা জেলা অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইসমাইল হোসেন কালবেলাকে জানান, বন্যায় চৌদ্দগ্রামে ২২ গরু, ৫৩ ছাগল, ৯ ভেড়া, ৫১ হাঁস ও ১ লাখ ১২ হাজার ২০০ মোরগ মারা গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে।
আমরা ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আড়াই নাকি তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে আমি শুনেছি। ওই টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ব্যয় করা হবে বলে তিনি জানান।