‘কখনো ভাবিনি পরিবারের মুখ দেখতে পারব। সেদিন মৃত্যু থেকে বলা যায় এক সেকেন্ড দূরে ছিলাম। পৃথিবী অন্ধকার মনে হয়েছিল সেদিন।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গ্রেনেড হামলায় আহত সাবেক ছাত্রদল নেতা লিটন আহমদ সেদিনের দুর্বিসহ সময়ের কথা এভাবে বর্ণনা করলেন।
গত ৪ আগস্ট সিলেটের বন্দরবাজারে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এ সময় সাউন্ড গ্রেনেড ও ছররা গুলিতে মারাত্মকভাবে পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন সিলেট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাবেক সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি লিটন আহমদ। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় লিটনের ডান পা।
অন্তত অর্ধশতাধিক গুলি লাগে তার পায়ে। এর আগে গত ১৯ জুলাই একই স্থানে প্রথমবার গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরপর দুবার গুলিবিদ্ধ হওয়ায় পর মারাত্মতকভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয় দুই পা। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ায় এখন কোনো প্রকারে চলাচল করতে পারছেন। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ আছেন তিনি।
কালবেলার সঙ্গে কথা হয় লিটন আহমদের। তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে হত্যা ও গুলির প্রতিবাদে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল সিলেট নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলন করে। পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলে গুলি চালায়। সেদিন আমাদের প্রায় ৩০০ জন নেতাকর্মী আহত হন। সেদিন সাড়ে ৫টার দিকে আমি বিক্ষোভ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হই। অনেক গুলির স্প্লিন্টার লাগে শরীরে। তারপর আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।
গত ৪ আগস্ট সিলেট নগরীর বন্দর কোর্ট পয়েন্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিকে সমর্থন জানিয়ে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মিছিলসহ যোগ দেয়। বিক্ষোভ মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে হঠাৎ করে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। কোর্ট পয়েন্ট থেকে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ মিছিলে গুলি ছুড়লে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলি। ছাত্র-জনতা হাতের কাছে যা পেয়েছে তা দিয়ে প্রতিরোধ করি। পুলিশের পরপর গুলিতে দুজন আন্দোলনকারী জেলরোডে মাটিতে পড়ে যায়। তখন পরিবারের কথা ভুলে আমি তাদের দৌড়ে বাঁচাতে যাই। পুলিশ আমাকে একা পেয়ে পরপর গুলি ছোঁড়ে ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আমি তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হই।
তিনি জানান, একজন সহকর্মীর সহযোগিতায় আমি একটি বাসায় আশ্রয় নেই। সঙ্গে অন্যান্য সহকর্মীরা খবর পেয়ে আমাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেদিন পুলিশের বর্বর আক্রমণ এখনও মনে পড়ে। কখনো ভাবিনি পরিবার ও আপনাদের মাঝে ফিরে আসবো।
লিটন বলেন, আপনারা দেখেছেন বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আমরা ১৭ বছর থেকে ধাপে ধাপে আন্দোলন করে আসছি। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা প্রথমে কোটা সংস্কার আন্দোলনে তখন থেকে আমাদের দল তাদের সমর্থন দিয়ে আসছি। পরবর্তীতে যখন তারা দেশের সাধারণ জনগণকে আহ্বান করে তখন আমরা ও তাদের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করি এই খুনি শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। অনেক শহীদের আত্মত্যাগ, পঙ্গুত্বের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে পলাতক আছেন।
এম ইলিয়াস আলী, দিনারসহ যারা গুম এবং আয়নাঘরে যেসব নেতাকর্মী আটক আছেন তাদের মুক্তি চাই। আমাদের মনে রাখতে হবে পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রের ইন্ধনে শেখ হাসিনা সরকার অনেক কিছু করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের নির্লজ্জ পতন থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমরা শান্তি, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা রক্ষা, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে বাংলাদেশি পরিচয়ে বাস করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ভোটাধিকারের মাধ্যমে আমরা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। আমার আজকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছেন, বিজয়ীদের কাছে পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের গৌরব মহামান্বিত হয়। অন্যায় ও দুর্নীতি কারণে মন্ত্রী, এমপিদের গ্রেপ্তার ও পলাতক বিষয়ে শিক্ষা নিয়ে আমরা আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলি।