কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ভয়াবহ বন্যার তাণ্ডবে প্রাণিসম্পদে ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে বলেও জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইজমাল হাসান কালবেলাকে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে এ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অনেক এলাকায় এখনো পশুপাখি বন্যাকবলিত রয়েছে। যার ফলে এ উপজেলার সাধারণ গৃহস্থরাসহ খামারিরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, দুটি নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে অতিরিক্ত পানির কারণে এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে প্রাণিসম্পদের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নের খামারি ও গৃহস্থরা সামান্য ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মুরগির খামারিরা। এ উপজেলায় পশু ও পাখির খামার মিলিয়ে মোট ২৮৭টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশু ও পাখির ক্ষতিসহ খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতি এবং পশু-পাখির খাবার বিনষ্ট হয়ে এ উপজেলায় বন্যায় মোট ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি টাকা। তবে প্রতিদিনই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহালক্ষীপাড়া এলাকার বাসিন্দা খামারি আবদুল কাদির কালবেলাকে বলেন, আমার দুই বিঘা জমির ঘাস বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার একটি গরুর ফার্ম ও ৩টি মুরগির ফার্ম বন্যার পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু মুরগি মারা যাওয়ার পর আমি কম দামে লোকসান গুণে অনেক মুরগি বিক্রি করে দিই। সব মিলিয়ে আমার ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আরেক পশু খামারি সাদেক হোসেন কালবেলাকে বলেন, হঠাৎ আসা বন্যায় আমার ২৫টি গরুর একটি খামার অবকাঠামোগত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো খামার থেকে পুরোপুরিভাবে পানি নামেনি। গরুগুলো সড়কের ওপর রেখে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। বন্যার পানি নেমে গেলে খামারটি নতুন করে উপযোগী করতে হবে। এতে আমাকে নতুন করে পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে। বন্যার কারণে আমি ক্ষতির মুখে পড়ে গেলাম।
ব্রয়লার মুরগির খামারি নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ভয়াবহ বন্যায় আমার ১ হাজার ২০০ মুরগি মরে গেছে। অবশিষ্ট মুরগিগুলোও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও আমার দুটি খামার অবকাঠামোগত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আমার ২ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি আমার পোষাবার নয়। আমি ক্ষুদ্র খামারি, আমি পথে বসে গেছি।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইজমাল হাসান কালবেলাকে বলেন, আকস্মিক বন্যায় ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের খামারি ও গৃহস্থরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এতে এ উপজেলায় প্রাণিসম্পদের প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন খামারি গিয়ে তাদের ক্ষতির পরিমাণ অফিসে জানাচ্ছেন এবং এ হিসাবটি প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যার কারণে মাঠে চাষ করা ঘাস তলিয়ে যাওয়ায় পশু খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
ডা. ইজমাল হাসান বলেন, বন্যাপরবর্তী সময়ে মানুষের মতো পশু পাখিদেরও নানা রোগ দেখা দেবে। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে আমরা ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এ থেকে উত্তরণে মাঠপর্যায়ে আমাদের লোক কাজ করছে। আমরা ভ্যাকসিন আনতে ও ওষুধের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই আমরা তা পেয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রতিদিনই আপডেট হচ্ছে। আমরা এ তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে জমা করে দেবো। আশা করছি, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্তরা উপকারভোগী হবেন।
মন্তব্য করুন