নদী থেকে বালু উত্তোলন এবং অতিরিক্ত পানির চাপে মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে নদীতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় বসতবাড়ি, দোকানপাট এবং রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মুছাপুর রেগুলেটর সংলগ্ন এবং জনতা বাজারের আশপাশে ১২০ থেকে ১৫০টি বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ভবন নদীতে তলিয়ে গেছে। এখনো হুমকির মুখে পুরো মুছাপুর ইউনিয়ন। এ ছাড়া ফেনীর কোম্পানীগঞ্জ-সোনাগাজী বন্ধন সেতুটির সংযোগ সড়ক ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে যানবাহন চলাচল এক ধরনের বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে না পারলে ফেনীর ছোট নদী ব্রিজসহ আশপাশের এলাকা নদীতে তলিয়ে যাবে। পাড়ের বাসিন্দারা প্রতিমুহূর্ত উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে পার করছেন।
নোয়াখালী সরকারি কলেজের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রদের একটি প্রতিনিধিদল কোম্পানীগঞ্জের নদীভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন যায়। এ সময় মুছাপুর জনতা বাজারের বাসিন্দা হাজি খুরশিদ আলম বলেন, আমার বয়স ১১০ বছরের ওপরে। আমার একটা ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরেকটা ঘরও যে কোনো মুহূর্তে নদী খেয়ে ফেলবে। মায়ার কারণে পিতৃভূমি ছেড়েও যেতে পারছি না। কথাগুলো বলতে বলতে কান্না করে দেন তিনি।
স্থানীয় ইদ্রিসিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক ও বিশিষ্ট সমাজসেবক নূরুল আলম বলেন, এ মুহূর্তে নদীভাঙন ঠেকাতে হলে নদীর মাঝখানে ড্রেজিং করে পানির প্রবাহকে ঘুরিয়ে দিতে হবে। আরিফুল ইসলামসহ অন্যান্য সমন্বয়ক ও ছাত্ররা এলাকাবাসীকে সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট সোমবার সকাল ১০টার দিকে মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে নদীতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, ২০০৪ সালে ডাকাতিয়া নদীর মুখে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এর কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালের দিকে। এতে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর, চরপাবর্তী, চরহাজারী ইউনিয়ন নদী ভাঙা এবং অতিরিক্ত জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পায়। সোমবার সকালের দিকে প্রথমে রেগুলেটরে একটু ফাটল দেখা দেয়। এরপর সকাল ১০টার দিকে রেগুলেটরের মাঝখানের অংশ ভেঙে যায়। একপর্যায়ে পুরো রেগুলেটর ভেঙে ডাকাতিয়া নদীতে তলিয়ে যায়।
এর আগে, গত ২৪ আগস্ট নোয়াখালীর বন্যার পানি নামাতে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটরের ৩ মিটার বাই ৩ মিটার আয়তনের ২৩টি গেটের সব গেট খুলে দেওয়া হয়। ফলে ওই সময়ের কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র মির্জা কাদেরের নেতৃত্বে তার পরিবার, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, তাদের দলীয় ক্যাডার ও ভূমিদস্যুরা মিলে মুসাপুর রেগুলেটরের আশপাশ থেকে অবৈধভাবে অন্তত ৫০ কোটি টাকার বালু উত্তোলন করেছে, যার কারণে এ রেগুলেটরটি ভেঙে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী কালবেলাকে বলেন, ফেনী ছোট নদী ব্রিজ (বাংলা বাজার ব্রিজ) রক্ষা করা নিয়ে সড়ক জনপথের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণের বিষয়ে ঢাকা থেকে এক্সপার্টরা আসবেন, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।