সম্প্রতি অনলাইন জুয়ার এজেন্ট মুরশিদ আলম লিপুর বাগানবাড়িতে অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। এর পরপরই আত্মগোপনে চলে গেছেন ক্যাসিনো এজেন্ট লিপু ও তার সহযোগীরা।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর-বিশ্বনাথপুর গ্রামের মধ্যবর্তী সড়কে অবস্থিত লিপুর বাগানবাড়িতে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। তবে অভিযানকাল সেখানে পাওয়া যায়নি লিপুকে। তারপর থেকেই লিপু ও তার ম্যানেজারসহ সহযোগীরা আত্মগোপনে রয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার শুধু শিবপুর ও কোমরপুর দুটি গ্রামেই শতাধিক ব্যক্তি অনলাইন জুয়ার অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন।
তাদের বর্তমান অবস্থান ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম কালবেলাকে বলেন, যৌথ বাহিনীর সোমবারের অভিযানের পর থেকে এলাকার সকল ক্যাসিনো ব্যবসায়ী গা ঢাকা দিয়েছে বলে বিভিন্ন সোর্স মারফত আমরা জানতে পেরেছি।
‘অনলাইন জুয়ার দুর্গে যৌথবাহিনীর হানা’ শিরোনামে কালবেলাতে খবর প্রকাশ হওয়ার পর অনলাইন জুয়ায় প্রতারিত অনেক ভুক্তভোগী যোগাযোগ করে কালবেলার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান কিভাবে অনলাইন জুয়া খেলে প্রতারিত হয়েছেন। এ ছাড়াও অনলাইন জুয়াতে সম্পৃক্ত বিভিন্ন এজেন্টের তালিকাও তারা প্রদান করেন। অনুসন্ধানের স্বার্থে সেই তালিকা এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। একজন স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ কালবেলার মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিকে অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত খবর প্রকাশে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাদের হাতে টাকা আছে, অস্ত্র আছে। তাই এদের বেশি ঘাটা ঠিক না।
ভুক্তভোগীরা যে সকল তথ্য সরবরাহ করেছেন, সেগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির নেতিবাচক সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনলাইনে গড়ে তোলা হয়েছে অপরাধের এই বিরাট সাম্রাজ্য। পদে পদে দেওয়া হচ্ছে লোভনীয় অফার। যেগুলো মূলত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ। সেই ফাঁদে পা দিয়ে শুধু অর্থ নয়, নৈতিক স্খলনও ঘটছে অনেকের। বারংবার কঠোরতা দেখিয়েও নানা ফাঁকফোকর আর কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের তৎপরতায় শেষপর্যন্ত নীরব পরাজয়ের শিকার হতে হচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্টদের। ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন গ্যাম্বলিং (জুয়া), বেটিং (বাজি) আর ক্যাসিনো।
সূত্র জানিয়েছে, অনলাইন জুয়াড়িরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নানা কৌশল এঁটেছে। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামে তারা এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ করছে। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করছে অপ্রচলিত বিভিন্ন অ্যাপস। যারা জুয়া খেলেন তারাও এসব অ্যাপ ও নাম্বার ব্যবহার করছেন। প্রতিনিয়তই নম্বরগুলো বদলে ফেলছেন তারা। চক্রের একজনকে গ্রেপ্তার করলে গ্রুপের সমস্ত তথ্য ডিলিট করে দেওয়া হয়। এছাড়া ছদ্মনামে এনক্রিপ্টেড অ্যাপে যোগাযোগ করার ফলে কেউ কাউকে চেনে না। এতে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারকৃতের কাছ থেকেও আশানুরূপ তথ্য পাওয়া যায় না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অনলাইন জুয়া পরিচালনা হচ্ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাইট থেকে। ফেসবুক-ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে এসব সাইটের বিজ্ঞাপন। বেটিং, ক্যাসিনো বা জুয়া বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও খুব সহজেই ওয়ান এক্স বেট, মেলবেট, বেট উইনার, জেটউইন বাংলাদেশ, মাইজেট, ক্রিকেক্স, বাজি ৩৬৫ ক্যাসিনোসহ (অন্যান্য বেটিং ও ক্যাসিনো ওয়েবসাইটের নাম অনুসন্ধানের স্বার্থে গোপন রাখা হলো) অনেক বেটিং ও ক্যাসিনোর ওয়েবসাইটে খুব সহজেই যুক্ত হওয়া যাচ্ছে। এসব সাইটে টাকা ডিপোজিট করে স্লটস, ই-গেমস, টেবিল গেম, কার্ড গেম, ভিডিও পোকার ও লাইভ ক্যাসিনোতে অংশ নেওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবং যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি তোজাম্মেল আজম কালবেলাকে বলেন, ইতোপূর্বে অনেকেই অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল। আইন অনুযায়ী দোষী প্রমাণিত হলে তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, তখন অনেকেই হয়তো নীরৎসাহিত হবে।
তিনি বলেন, একই সাথে টেলিভিশন এবং ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে নানা বেটিং অ্যাপসের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সরকারি উদ্যোগে এগুলো বন্ধ করা উচিত। অন্যথায় এই মহামারী বন্ধ করা সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন