বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ত্রাণ নয়, আত্মীয় বিপদে পড়লে আত্মীয় যেভাবে সহযোগিতা করে, আমরা এসেছি সেই সহযোগিতা করার জন্য, অন্য কিছু নয়।
মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিপদ সামনে, ডানে-বামে, পিছনে রেখেও আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি জানিয়ে রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডাকে কাজ করেছি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসরমুক্ত বাংলার মাটিতে আমরা একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছি, সেজন্যই আমরা এখানে আসতে পেরেছি। সারা দেশের মানুষ তার পূর্বাঞ্চলের ভাইদের সহযোগিতা করার জন্য ত্রাণ নিয়ে এসেছে। এমন অভূতপূর্ব সম্মিলন ও সংহতি কখনো দেখিনি। স্বৈরাচার হাসিনার সময় এ ধরনের একত্রে হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না, আজ তা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার রক্তের মধ্যদিয়ে রক্তপিপাসু শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে নির্ভয়ে আপনাদের কাছে ত্রাণ নিয়ে আসতে পেরেছি। কি ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল তারা (আওয়ামী লীগ), মনে হয়েছিল এই দেশ আপনার না, আমার না, শেখ পরিবারের! দেশটা মনে হয়েছিল শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের, মেয়ে পুতুলের, ভাগিনা-ভাগ্নির, চাচাতো ভাইয়ের, ভাতিজার, ভাস্তির। ৫১ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শেখ পরিবারের ব্যক্তিদের নামে করতে। গোটা বাংলাদেশে যেন ছিল তাদের বাবার জমিদারি। সরকারি একটি বিল্ডিং হবে সেখানেও থাকবে শেখ পরিবারের নাম, মনে হয় বাংলাদেশে আর কোনো খ্যাতিমান ব্যক্তির জন্ম হয়নি।
’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন সব রাজনীতিবিদ পালিয়ে গেছেন তখন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছিল। আপনি (শেখ হাসিনা) তো তার নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম করেননি বরং তার নামে যে বিমানবন্দরটি ছিল ঢাকায় সেটির নাম পরিবর্তন করেছিলেন। কারণ আপনার ভিতরে একটা অনুশোচনা আছে, যেটি আপনার পিতা পারেননি সেটি অন্যজন করবেন কেন? জিয়াউর রহমানের ওপর তার হিংসা এজন্যই- তার বাবা যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তখন একজন মেজর চট্টগ্রামে বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ কারণেই জিয়াউর রহমানের নামে যত প্রতিষ্ঠান ছিল সবগুলোর নাম আপনি তুলে দিয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়া জনগণের প্রতি যে ওয়াদা রাখেন সেটি তিনি কখনো বরখেলাপ করেন না জানিয়ে রিজভী বলেন, অথচ শেখ হাসিনা সকালে যা বলেন বিকালে সেটি উল্টে ফেলেন। আপনাদের মনে থাকার কথা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গেলে তারা জাতীয় বেইমান হবেন এমন কথা শেখ হাসিনা বলেছিলেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেটি পরিবর্তন করে তিনি এরশাদের অধীনে নির্বাচন করেছিলেন। আমাদের নেতা-নেত্রীরা কখনই জনগণের সঙ্গে মুনাফেকি করেননি। এটা আমাদের গর্ব আমরা জাতীয়তাবাদী পতাকার তলে থাকি।
একজন রক্তখেকো নারী ফেরাউনের পতন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই নারী ফেরাউনের পতনের মধ্য দিয়ে একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই পরিবেশের মধ্য দিয়েই আমাদের অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের সামনে তিনি বলেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যারা দখলদার, লুটপাট, চাঁদাবাজি করছে তারা বিএনপির কেউ নয়। এদের ধরিয়ে দিন। যারা অপরাধ করেছেন তাদের পুলিশে ধরিয়ে দিন, আপনারা আইন হাতে তুলে নিবেন না। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের বিপরীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা তো লড়াই করেছি আইনের শাসনের জন্য।
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানী।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াসিন আলী, সহসভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, হাসান বিন শফিক সোহাগ, এমজি মাসুম রাসেল, রেজাউল ইসলাম রিয়াজ, যুগ্মসম্পাদক শহিদুল ইসলাম সোহেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান। ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মহসিন সিদ্দিকী রনির সঞ্চালনায় স্থানীয় বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।