আওয়ামী লীগ সরকারের রোশাণলে পড়ে বারবার শাস্তিমূলক বদলি হওয়া পদ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামানকে এবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়তে হলো। এ ছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের ৪১ জন চিকিৎসককে হাসপাতালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই ৪১ জন চিকিৎসকের মধ্যে স্বাচিপ নেতাদের পাশাপাশি কোনো দল না করা চিকিৎসকও রয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জন চিকিৎসকই বহির্বিভাগে রোগী দেখেন।
তবে নাগরিক সমাজের দাবি, সঠিক তদন্ত করে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর বিভিন্নভাবে অনৈতিক সুবিধাভোগী চিকিৎসকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নিরীহ চিকিৎসকদের কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হন চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। কিন্তু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো তত্ত্বাবধায়ক পোস্ট ছিল না তখন। ফলে নির্দিষ্ট বসার জায়গা ও রুম না পেয়ে তিনি চার মাস শাস্তি ভোগ করেন। এর আগে যশোর সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালীন এমএসআর টেন্ডার নিয়ে যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল এবং সাবেক মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এর অনৈতিক দাবি ও টেন্ডারবাজি রুখে দেন এই সৎ কর্মকর্তা।
তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রীর অনৈতিক ও দুর্নীতি রুখতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তমিদুল ইসলাম খান এবং পুলিশ সুপার প্রণয় কুমার জোয়ার্দারকে লিখিত অনুরোধ করেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে তাকে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে যা তৎকালীন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পায়।
তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যশোর থেকে খুলনা বিভাগীয় পরিচালকের অফিসে এক গ্রেড নিচে নামিয়ে দিয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারী পরিচালক হিসেবে শাস্তিমূলক বদলি করে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু সেখানে সততার সঙ্গে চাকরি করে চলতি বছর তার আবারও ৪র্থ গ্রেড প্রাপ্তি হলে আবারও তাকে শাস্তিমূলক পদহীন খুলনা মেডিকেল কলেজের তত্ত্বাবধায়ক পোস্টে বদলি করা হয়। যেখানে গত ২০১৯ সাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক পদই বিলুপ্ত হয়েছে। চলতি বছরের গত জুলাই মাসের ২৫ তারিখে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন উপ-পরিচালক বদলি হলে সেখানে উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন আক্তারুজ্জামান।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে মেডিকেল কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে উপস্থিত হন কার্ডিওলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোস্তফা কামাল। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন ৪১ জন চিকিৎসক একটি তালিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এতে আতঙ্কে ভয়ে দুটি কাগজেই স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আক্তারুজ্জামান।
এই ৪১ জন চিকিৎসকের মধ্যে পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএস, আরএমও, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্টের চিকিৎসক রয়েছেন।
উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, জীবনে কেউ আমাকে আওয়ামী লীগ ও স্বাচিপ কোনো কিছুর প্রাথমিক সদস্য হয়েছি কোনো দিন দেখাতে পারলে আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নেব। আমি কোনো দিন সরকারি চাকরি ছাড়া কোনো দিন কোনো আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছি এমন কোনো রেকর্ড নেই। বরং আমাকে আওয়ামী লীগ সরকার বারবার শাস্তিমূলক বদলি করেছে। ইসলাম মানা ও সততার কারণে প্রমোশন দেয়নি। নিচের গ্রেডে নামিয়ে দিয়েছে। এতো সবকিছুর পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বিল্পবের পর ভাবলাম এবার হাসপাতালের জন্য কিছু করতে সুযোগ পাবো কিন্তু আমাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করালো। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।
খুলনা মেডিকেল কলেজ এর ইন্টার্ন চিকিৎসক ফোরামের সদস্য সচিব ডা. তাহমিদ মাশরুর বলেছেন, স্যার ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল এমন অভিযোগে তাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পদত্যাগ দাবি করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ বিষয় অবগত নয়।
ডা. মোস্তফা কামালকে তার মোবাইল নম্বরে বারবার কল এবং তার হয়্যাটসআপ নম্বরে ম্যাসেজ এবং কল দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি। ম্যাসেজ এর রিপ্লাইও দেয়নি।
মন্তব্য করুন