দীর্ঘ ১৮ বছর পর স্বনামে ফিরল গোপালপুর উপজেলার এইচ-বি আব্দুস সালাম পিন্টু কলেজ। প্রতি বছর ভালো রেজাল্ট সত্ত্বেও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর নামে কলেজের নামকরণ থাকায় এমপিও থেকে বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এমনকি ন্যূনতম সরকারি সাহায্য-সহযোগিতাও পায়নি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক, কর্মচারী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হাদিরা ইউনিয়নের বৈরাণ নদের তীরে ১৯৯৯ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু। প্রায় ১৫ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠাতা দাতা সদস্য হন। কিন্তু ২০০১ সালে আব্দুস সালাম পিন্টু শিক্ষা উপমন্ত্রী হওয়ার পর কলেজটি পাঠদানের সরকারি অনুমতি পায়। ২০০৩ সালে কলেজটি অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৫ সালে এমপিও লাভের যোগ্যতা অর্জন করে। পরের বছর কলেজটি এমপিও তালিকাভুক্ত হয়।
কিন্তু ২০০৬ সালের শেষদিকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে এমপিও কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এরপর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের হয়। সেই বানোয়াট মামলায় তিনি অন্তরীণ হন। এরপর লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুর অনুসারীদের বিরুদ্ধে বহু গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়ে এইচবি আব্দুস সালাম পিন্টু কলেজ। কলেজের সিনিয়র শিক্ষক সুলতান মাহমুদ জানান, লীগের নেতারা প্রকাশ্যে কলেজ আঙিনার মূল্যবান বহু গাছ কেটে নিয়ে যান। কলেজ গুদামে রাখা ঢেউটিন বিক্রি করে দেন। কয়েকজন শিক্ষককে কলেজে আসতে বাধা দেন। তারা কলেজের নাম পাল্টে নামকরণ করেন হাদিরা-ভাদুড়িচর কলেজ। তারা জোর করে গভর্নিং বডির পদ দখল করে নেয়।
পরে এমপিও করার নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে তিন দফায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়; কিন্তু এমপিও হয়নি। টাকাও ফেরত দেয়নি। এদিকে শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা অধিদপ্তরে কলেজের নাম হাদিরা-ভাদুড়িচর কলেজ এবং এইচ-বি আব্দুস সালাম পিন্টু কলেজ উভয় নাম থাকায় নামের বিভ্রাটের দরুন নতুন করে এমপিও তালিকাভুক্ত হয়নি।
এলাকার শিক্ষা-হিতৈষী হুমায়ুন কবীর তালুকদার জানান, দুর্গম এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে। অনেকটা বিনা বেতনেই তারা পড়ালেখার সুযোগ পায়। কিন্তু বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় এবং তার নামে কলেজের নামকরণ থাকায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেড় যুগেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজটি এমপিওভুক্ত করেনি। তিনি অতিদ্রুত কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানান।
কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য এবং হাদিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজাহার আলী জানান, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই কলেজের পড়ালেখার মান খুব ভালো। ফলাফলও সাড়া জাগানোর মতো। শুধু নামকরণের কারণে কলেজটি বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
এ অবস্থায় গত সোমবার এলাকার ক্ষুব্ধ জনতা হাদিরা-ভাদুড়িচর কলেজ নামকরণের সাইনবোর্ড নামিয়ে অ্যাকাডেমিক ভবনে এইচ-বি আব্দুস সালাম পিন্টু কলেজ সাইনবোর্ড প্রতিস্থাপন করেছেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিদ্দীকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মন্তব্য করুন