নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিশুদের ক্লাস চলছে ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রতি বছর বিদ্যালয় ভবনে শুধু চুনকাম করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। এমনকি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে টিনশেড ঘরও নির্মাণ করা হয়নি কোনো বিদ্যালয়ে।
ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ায় ব্যবহার অযোগ্য এসব ভবনে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। প্লাস্টারের পাশাপাশি দরজা জানালার গ্রিলও খসে পড়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন কারণে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয় বিকল্প ব্যবস্থা নিলেও অধিকাংশে পাঠদান চলছে জরাজীর্ণ ভবনে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যেও বিরাজ করছে হতাশা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস চালিয়ে যাওয়া বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- মাচিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উজিয়ালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চৌকিধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ হাদিয়া মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুরচাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দীগর সইলাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গগডা কোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জানা যায়, এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় আছেন। এসব জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনে ছাদের পলেস্তারা নেই। মরিচাযুক্ত রড ফেটে ফেটে পড়ছে। নিরাপত্তা পিলারের ইট সুরকি খসে ভেতরের রড বেরিয়ে গেছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ের জানালা নেই, মরিচা ধরে ভেঙে পড়ে রয়েছে।
কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ পাকা ভবনটি ১৯৯৯ সালে পাকা করা হয়। সেখানে রয়েছে চারটি রুম। একটি রুম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তালাবদ্ধ রয়েছে। ফলে শ্রেণিকক্ষ ও অফিস কক্ষের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন, ইমা, ইভা, সিয়াম জানান, শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকার কারণে বিদ্যালয়ে কষ্ট করে এক রুমে দুই ক্লাস করতে হচ্ছে। স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় শ্রেণিকক্ষের ছাদ থেকে পলেস্তারা শরীরের ওপর পড়েছে কয়েকবার। তাই ভয় হয় সবার। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে। এখানে নতুন ভবন নির্মাণ হলে আমাদের আর কষ্ট হবে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, এই বিদ্যালয়ে ৮৮ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন চারজন। বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা মোটেও ভালো না। সিমেন্ট উঠে যাচ্ছে। দেয়াল ও ছাদের ফাটলগুলো দিন দিন বড় হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ভবনটি। একটা ভবন খুবই দরকার।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মির্জা মোহাম্মদ জানান, আমিও শুনেছি ভবনটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাব। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাচিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক আব্দুল হেলিম শেখ বলেন, ভবনটি চার কক্ষবিশিষ্ট। বর্তমানে ভবনটি খুব জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্ট করে ক্লাস চালাতে হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, কেন্দুয়া উপজেলায় ১৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। জরাজীর্ণ এসব বিদ্যালয় ভবনে পাঠদান করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই এসব বিদ্যালয়ে যতদ্রুত সম্ভব নতুন ভবন নির্মাণ করা জরুরি।
মন্তব্য করুন