বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৫ আগস্ট বিকেলে সারা দেশের মতো গাজীপুরের কোনাবাড়িতে বিজয় মিছিলে অংশ নেয় সাধারণ মানুষ। পরিবারের দাবি সেখান থেকে নিখোঁজ রয়েছে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের আলমনগর মধ্যপাড়ার কৃষক লাল মিয়া ও রেহেনা বেগম দম্পতির একমাত্র পুত্র মো. হৃদয় (২০)।
একই দিন বিকেল ৫টায় শরীফ জেনারেল হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেডের গেট সংলগ্ন ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ ঘেরাও করে একজনের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলির পর চ্যাংদোলা করে উঠিয়ে নেওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। হৃদয়ের পরিবারের সদস্যদের দাবি, পরনের পোশাক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওটাই ছিল হৃদয়। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার সন্ধান মেলেনি। হৃদয় ২০২২ সালে এসএসসি পাসের পর হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি দরিদ্রতার কারণে চার মাস আগে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে অটোরিকশা চালিয়ে উপার্জন করত। তার বড় দুটি বোন রয়েছে।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবারের সদস্যরা। এলাকায় নেমেছে শোকের মাতম। হৃদয়ের ভগ্নিপতি মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আমরা দুজন এক বাসায় থাকতাম। মিছিলে গুলির ঘটনায় আমি কোনাবাড়ি মেট্রো থানা সংলগ্ন একটি বাসায় আশ্রয় নিই। ওই বাসার গেটে দূর থেকে দেখতে পাই চারজন পুলিশ গুলিবিদ্ধ একজনকে চ্যাংদোলা করে থানার সামনে নিয়ে বেঞ্চের আড়ালে লুকিয়ে রাখে।
হৃদয়ের মতো দেখতে ও পোশাক হলেও গুলির ভয়ে তখন কাছে যাইনি। পরে শুনি রাত ৩টায় সব পুলিশ পালিয়ে গেছে। এরপর বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে হৃদয়ের পরনের লুঙ্গি পেয়েছি।
আলমনগরের সাবেক ইউপি সদস্য আ. হামিদ বলেন, ওই ঘটনার একটু দূরেই আমার দোকান রয়েছে। গুলির ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বর্ণনায় নিশ্চিত হয়েছি, ওটাই হৃদয়।
এদিকে ভিডিও দেখে হৃদয়ের বাবা, মা ও বোনের চিৎকারে ভারী উঠেছে বাতাস। তাকে জীবিত বা মৃত খুঁজে এনে দেওয়ার অনুরোধ জানান। মৃত হলে তাকে যেন শহীদী মর্যাদা দেওয়া হয় এবং খুনিদের উপযুক্ত বিচার করা হয়।
মন্তব্য করুন