কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আবারও পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মোসলেমপুর ১২ মাইল টিকটিকিপাড়া ও মুন্সিপাড়ার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শহর রক্ষা বেড়িবাঁধসহ কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে তিন গ্রামের প্রায় আট হাজার মানুষের।
এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন রায়টা বেড়িবাঁধের কাছাকাছি ভাঙনকবলিত স্থান থাকায় উপজেলার জুনিয়াদহ ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েক হাজার পরিবার আতঙ্কে আছে।
রূপপুর পারমাণবিকের কারণে নদীর ঈশ্বরদী অংশে পারমাণবিক স্থাপনা ঘেঁষে নদী শাসন করা হয়েছে। ফলে নদীভাঙনের কবলে পড়েছে ভেড়ামারার বিভিন্ন এলাকা। এ কথা বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা জাকিরুল ইসলাম।
বাহিরচর ইউনিয়নের ১২ দাগ মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা টিক্কা মুন্সি বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন আবার শুরু হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে এই মুন্সিপাড়ারই শত শত বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে- ১২ মাইল টিকটিকি পাড়ার নদীভাঙন স্থান থেকে শহর রক্ষাকারী বেড়িবাঁধের দূরত্ব মাত্র ১২০ মিটার। এই বাঁধ ভেঙে গেলে আমাদের আর রক্ষা নেই।
তিনি আহাজারি করে বলেন, গত বছর এ জায়গাতেই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। আজ নদীগর্ভে পুরোটাই বিলীন হয়ে গেছে।
মোসলেমপুর এলাকার বাসিন্দা মিন্টু রহমান বলেন, বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে মোসলেমপুর আর টিকটিকি পাড়া এলাকার বাসিন্দারা। ভাঙন থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে রয়েছে মোসলেমপুর বেড়িবাঁধ। এখান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক। উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ গাড়ি এদিক দিয়ে যায়। খারাপ কিছু হলে গোটা যাতায়াত ব্যবস্থা শেষ হয়ে যাবে।
এ ছাড়া কিছু কিছু স্থানে বর্ষার পানিতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যখন ভাঙন শুরু হয় তখন এক ঘণ্টায় একবারে তিন চার বিঘা জমি চলে যায় নদীতে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার সময়, নাহলে যে কোনো সময় বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে। আমার নিজের বালু রাখার জায়গাও নদীতে চলে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ভেড়ামারাতে নদীভাঙনের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। প্রতি বছর পদ্মা নদীর বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য থামলেই নদীভাঙন অনেকটাই কমে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়ামারা পানি বিজ্ঞান শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, বর্তমানে হার্ডিং ব্রিজ স্টেশনের এই পয়েন্টে পানির লেভেল ১১ দশমিক ৭৩ মিটার। গত কয়েক দিনের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন। পদ্মার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমলে সাধারণত ভাঙন তীব্রতর হয়।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু কালবেলাকে বলেন, আমরা ভেড়ামারার ক্ষতিগ্রস্ত এবং ত্রুটিপূর্ণ নদী রক্ষা বাঁধের জায়গাগুলো মেরামতে কাজ করে যাচ্ছি। উজান ও ভাটি মিলে বাহিরচর ইউনিয়নের মোসলেমপুরের দুটি স্থানের ১০০০ কিমি এবং জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুরে ১০০ কিমি জুড়ে চলমান বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি।
এ ছাড়া নদী তীরবর্তী বাঁধ রক্ষার জন্য মোট ১৬১ মিটার জরুরি প্রটেকশন কাজের অনুমোদন পাওয়া গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেছেন, আমরা ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলেছি। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার কাজ করেছি। ভেড়ামারার বাহিরচর ইউনিয়ন এবং পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে ইতোমধ্যেই আমরা কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছি।
মন্তব্য করুন