বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ ৯৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই সেতুর উদ্বোধন ও ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রকল্পটির পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে প্রকল্পের কাজে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। কিছুদিন আগে গাড়ি না চলায় মালামাল ঠিকমতো আসেনি। সেজন্য কয়েকদিন কাজ বন্ধ ছিল। কিন্তু তাতে প্রকল্পের কাজে কোনো ভাটা পড়েনি। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই সেতুটি উদ্বোধন করা হবে এবং ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে পাইলিংয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেলসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
সেতুর ৫০টি পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা ৪৯টি মরিচারোধী স্টিলের স্প্যান। চলতি বছরের জুন মাসে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সেতুর সুপার স্ট্রাকচার। লুপ লাইন, দুপাশের অ্যাপ্রোচ লেন, স্টেশন স্থাপনসহ সব কাজই শেষ হয়ে গেছে।
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল লিমিটেডের সাব স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম বলেন, সেতুর ওপর রেললাইন, দুইপাশের অ্যাপ্রোচ লেন বসানো, আধুনিক প্ল্যাটফর্মসহ স্টেশন স্থাপন, ড্রেন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে। এখন মূলত সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।
সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (ওয়ে) মো. আহসানুর রহমান বলেন, এই রেলসেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। পরিবহন খরচ কমার পাশাপাশি মহাসড়কের ওপর চাপও কমবে। উত্তরবঙ্গ থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজেই ঢাকাসহ সারা দেশ রপ্তানি করা সম্ভব হবে। সেতুটি ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগের বিড়ম্বনা কাটিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। ফলে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুটির নির্মাণকাজ ডিসেম্বরেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।