পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে জুনিয়র সহকারী শিক্ষকের নামে সরকারি কোয়ার্টারে কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে বেআইনিভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক বসবাস করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত সেই শিক্ষকের নাম মো. নূরুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভেতরে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও কর্মচারীদের জন্য সাতটি সরকারি কোয়াটার রয়েছে। এর মধ্য পাঁচটি ফ্যামেলি কোয়ার্টার এবং দুটি ব্যাচেলর কোয়ার্টার। এর মধ্যে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বসুন্ধরা ব্যাচেলর কোয়াটারে আটজন কর্মকর্তার নামে কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। তাদের প্রত্যেককে সরকারি বাড়ি ভাড়ার ১০ শতাংশ হারে মাসিক কক্ষ ভাড়া দিতে হয়।
অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোত্তালেব হোসাইনের নামে একটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয় যা সেই মাস থেকেই কার্যকর হয়। মাসিক কক্ষ ভাড়া হিসেবে তার সরকারি বাড়ি ভাড়ার ১০ শতাংশ তথা ৭২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সরকারি কোয়ার্টারের বরাদ্দকৃত কক্ষ গত ১৫ মাস ধরে সহকারী শিক্ষক মো. মোত্তালেব হোসাইনের পরিবর্তে বসবাস করে আসছেন নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল ইসলাম। বরাদ্দ নেওয়ার সময় তিনি বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল ইসলাম সপ্তম গ্রেডে প্রতি মাসে ৫৪ হাজার ৭৭০ টাকা মূল বেতন এবং মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ তথা ১৯ হাজার ১৬৯ টাকা বাড়ি ভাড়া হিসেবে পান। সেই হিসেবে তিনি যদি সরকারি কোয়াটারে থাকতে চান তাহলে প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়ার ১০ শতাংশ তথা ১ হাজার ৯১৬ টাকা প্রদান করতে হবে। অথচ তিনি ১৫ মাস ধরে সহকারী শিক্ষক মো. মোত্তালেব হোসাইনের জন্য নির্ধারিত বাড়ি ভাড়া ৭২০ টাকা করেই প্রদান করছেন। এতে করে গত ১৫ মাসে সরকারি কোষাগারে ১৭ হাজার ৯৪০ টাকা কম ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া সরকারি কোয়ার্টার একজনের নামে বরাদ্দ নিয়ে আরেকজনের বসবাস করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এ বিষয়ে কক্ষ বরাদ্দ নেওয়া সহকারী শিক্ষক মো. মোত্তালেব হোসাইনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগের প্রধান শিক্ষক আমার কাগজ নিয়ে কোয়াটারে কক্ষ বরাদ্দ নিয়েছেন। উনি আমাকে বলেন, উনার নামে নিলে টাকাপয়সা বেশি লাগবে আর আমার কাগজ দিয়ে নিলে টাকা কম লাগবে। একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান যদি আমাকে বলেন তাহলে কী আমার না করার উপায় আছে? তাই আমি আমার কাগজ দিয়েছি।
এদিকে জুনিয়র শিক্ষকের নামে সরকারি কোয়ার্টারে কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে বেআইনিভাবে কেন থাকছেন জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, এটা তো একজনের নামে বরাদ্দ থাকলেই থাকা যায়। পঞ্চগড়, সৈয়দপুর অনেক জায়গায় থাকে। আমি যখন উঠি ইউএনও স্যার এবং বিআরডিবি কর্মকর্তার কনসার্ন নিয়েই উঠেছি।
অভিযোগ রয়েছে, একজনের নামে কোয়াটার বরাদ্দ নিয়ে অন্যজন দীর্ঘদিন ধরে কম ভাড়া দিয়ে বসবাস করে আসলেও নেওয়া হয়নি কোনো ধরনের ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, একজনের নামে কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে আরেকজন থাকছে এমন কোনো তথ্য আমার জানা ছিল না। যদি কেউ এভাবে থেকে থাকে তাহলে তাকে তার নামে কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে থাকতে বলবো।
এতদিন কম ভাড়া দেওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে, ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ ইউএনও মো.শরীফুল আলম বলেন, এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন