এক যুগ ধরে এখনো ছেলে মুকাদ্দাসের ফেরার অপেক্ষায় মা আয়শা। প্রায়ই স্বপ্নে দেখেন ছেলে ফিরে আসার। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেন তিনি। ছেলের সন্ধান না পাওয়ায় এখনো অপেক্ষায় ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া পিরোজপুরের সন্তান মুকাদ্দাসের মা আয়শা সিদ্দিকা। পিরোজপুর সদর উপজেলার খানাকুনিয়ারী গ্রামের মাওলানা আব্দুল হালিম ও আয়শা সিদ্দিকার বড় সন্তান আল মুকাদ্দাস হোসেন (২৪)।
দাখিল ও আলিম শেষ করে ২০০৫-০৬ সেশনে তিনি ভর্তি হন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে এক সময়ে হয়ে উঠেন জনপ্রিয় ছাত্রনেতা। জানা গেছে, আল-ফিকহ ও আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মুকাদ্দাস ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যান। ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু ওয়ালিউল্লাহর সঙ্গে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন।
বাসটি সাভারের নবীনগর এলাকায় পৌঁছলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ৮ থেকে ১০ জন লোক বাস থেকে মুকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহকে নামিয়ে নিয়ে যান। দুদিন পর স্বজনরা বিষয়টি জানার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরনা দিয়েও কোনো সন্ধান পাননি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার পর ৬ ফেব্রুয়ারি মুকাদ্দাসের নিখোঁজের ঘটনায় তার চাচা আবদুল হাই রাজধানীর দারুস সালাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ছেলেকে উদ্ধারের জন্য চলে বিভিন্ন আইনিপ্রক্রিয়া। একযুগ কেটে গেল, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলো। আয়না ঘর থেকে উদ্ধার করা হলো অনেককেই। কিন্তু কোনো সন্ধান মেলেনি মুকাদ্দাসের।
মুকাদ্দাসের মা আয়শা সিদ্দিকা কালবেলাকে বলেন, আমাদের ধারণা মুকাদ্দাস আয়না ঘরে আছে। আয়না ঘরের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি ধরা পড়ায় তারা আশা ফিরে পেয়েছেন যে, তারা তার ছেলের সন্ধান জানতে পারবেন। আমি এখনো স্বপ্নে দেখি ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে। ছেলের ফেরার অপেক্ষায় আছি আমরা। আমার বিশ্বাস, একদিন মুকাদ্দাস ফিরবে।
বাবা মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আমরা র্যাবের দপ্তরে অনেক ঘোরাঘুরি করেও কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারিনি। জালেম সরকারের পতন ঘটেছে কিন্তু জুলুম নির্যাতন যা করেছে তার ফলাফল বন্ধ হয়নি। যারা অত্যাচার-নির্যাতন করেছে তারা ঠিকই বেঁচে আছে। যারা অত্যাচারের শিকার হয়েছে তারা এখনো পথে পথে ঘুরছে। আমি এখনো আশা করি ছেলে ফিরবে।