সাভার আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাসসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
শ্রমিকদের কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়ার ৩০টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে সাভারের আশুলিয়ার পলাশবাড়ি-বাইপাইল এলাকায় যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রমোশন, চাকরিতে ১০ বছরের নিশ্চয়তা এবং আন্দোলনে যারা যোগ দিয়েছে তাদের ছাঁটাই না করাসহ গিল্ডান নামে কানাডিয়ান মালিকানাধীন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে নামেছে গতকাল থেকে।
সোবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানাটির সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের ফলে এ সময় নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সড়কে চলাচলরত যাত্রীরা। এ সময় স্কুল ফেরত শিক্ষার্থী, রোগী ও বয়স্কদের ভোগান্তি পৌঁছেছিল চরমে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাজিরা বোনাস ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকাসহ ১০টি দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
এ ছাড়াও নারী ও পুরুষকে সমতার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ডিইপিজেড সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশাীরা।
অন্যদিকে সকাল থেকে দুপুর আনুমানিক ২টা পর্যন্ত বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের মাঝামাঝি এলাকার নরসিংহপুর জামগড়া ইউনিকসহ কয়েকটি স্পটে বিক্ষোভ করতে থাকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। দুপুর আড়াইটার দিকে বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
তবে পলাশবাড়ির তৈরি পোশাক কারখানা গিল্ডান এবং আশুলিয়ার ডিইপিজেড এর সামনের নবীনগর-চন্দ্রা সড়কটি রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধ করে রেখেছেন চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গিল্ডান পোশাক কারখানার একজন নারী শ্রমিক বলেন, আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি। আমরা কাজ করতে চাই। আমাদের কোম্পানির মালিক আমাদের সুযোগ সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দিলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা রয়েছেন তারা সেগুলো লুটেপুটে খাচ্ছেন। আমরা আমাদের অধিকার ফেরত চাই। পাশাপাশি দ্রুত কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন বলেন, সকালে বেশ কিছু লোক লাঠিসোটা নিয়ে জামগড়া এলাকার দ্য রোজ কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে তারা আইডিএস কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে চলে যায়। তারা আসলে শ্রমিক কিনা তা বোঝা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তারা চাকরিপ্রত্যাশী হতে পারেন।
শিল্প পুলিশের একজন সদস্য জানায়, সকাল ১০টার পর আন্দোলনরত শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেড তৈরি করে অবরোধ করে বিভিন্ন কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে করে শিল্পাঞ্চলে উত্তেজনা শুরু হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের অন্তত ৩০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের ব্যারিকেড তুলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সমর্থ হয়। তবে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ডিইপিজেড সামনের এলাকার চাকরিপ্রত্যাশীরা এখনো অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। ডিইপিজেডের সামনে চাকরির দাবিতেও বিক্ষোভ করছেন কিছু চাকরিপ্রত্যাশী। এ ছাড়াও গিল্ডান বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় আন্দোলন করছে শ্রমিকরা। বিক্ষোভের কারণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি
মন্তব্য করুন