বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। আজ সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শুরুতে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের খবর পাওয়া গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা অভিযোগ আসতে থাকে।
এরইমধ্যে বরিশাল সিটির অন্তত অর্ধশত ভোটকেন্দ্র থেকে হামলা, কেন্দ্রের এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ভোট প্রদানে বাধা, ইভিএমে অনিয়ম, জোর করে ভোট দিয়ে নেওয়ার অভিযোগসহ কালবেলা প্রতিবেদকের হাতে নানা খবর এসেছে। দুপুর পর্যন্ত পাওয়া অভিযোগগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা:
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের দাবি, হঠাৎ করে তার ওপর হামলা করা হয়েছে এবং তাকে অনেক মারধরও করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্ডধারী লোকজন আমাকে প্রথমে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। তখন আমি বললাম, আপনি তো প্রশাসনের কেউ না, তাহলে আমাকে ঢুকতে দেন না কেন। ওখানে একজন মহিলা পুলিশ ছিল, উনি একদম নির্বাক।’
ফয়জুল করীম বলেন, আমরা কতগুলো অভিযোগ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যাই। সেখানে অভিযোগ দেওয়ার পরে বের হয়ে ২৭ নম্বর কেন্দ্রে সাবেরা খাতুন স্কুলে ঢুকে দেখি আওয়ামী লীগের ব্যাজধারী লোকজন ভেতরে। তখন আমি প্রিসাইডিং অফিসারকে গিয়ে বললাম, এখানে তো ব্যাজধারীরা থাকতে পারে না। তখন আমি তাদের বললাম, আপনারা কি এখানকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা? তারা বলল, না। ওখানে যারা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল লোক ছিল, তাদের বললাম নির্বাচনে যে-ই বিজয়ী হয় হোক আমরা শুধু প্রভাব সৃষ্টি করব কেন, এভাবে কথা বলতে বলতে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেছে। এসব বলতে বলতে হঠাৎ আমার ওপরে আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। আমি তো চিন্তাও করতে পারিনি, কোনো উত্তেজনাপূর্ণ কথাও হয়নি, হঠাৎ করে আমার ওপর আক্রমণ শুরু করেছে। পরে আমার লোকজন নিয়ে আমি বের হয়ে যাই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার মো. মাসুম বিল্লা বলেছেন, মেয়র প্রার্থী ফয়জুল করীমের সঙ্গে নগরীর সাত নম্বর ওয়ার্ডের ৭৩ নম্বর আছমত আলী বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এমনিতেই প্রার্থী আসার সঙ্গে সঙ্গে একটু হট্টগোল হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজন ছিল তাদের সঙ্গে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছে। তবে কোনো হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি বলেও জানিয়েছে তার এজেন্টরা।
পোলিং এজেন্টের কার্ড ছিনিয়ে নেয়া :
নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোডের শেরে বাংলা দিবা-নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় পুলিশ ও প্রিসাইডিং অফিসার নীরব ভূমিকায় ছিলেন বলেও অভিযোগ হাতপাখার কর্মী-সমর্থকদের।
পোলিং এজেন্ট ঢুকতে বাধা :
৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ওজোপাডিকা-২ (ওয়াপদা অফিস) আমানতগঞ্জ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন হাতপাখার এক প্রার্থী। প্রিসাইডিং অফিসারকে জানালে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ তার।
আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রতিবন্ধকতা :
১ নম্বর ওয়ার্ডের লাকুটিয়া সড়কের সৈয়দুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ হাতপাখার প্রার্থীর। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটকে জানালে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেননি বলেও অভিযোগ করা হয়।
হাতপাখার ক্যাম্প ভাঙচুর :
৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া সেকশন রোডের আসমত মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে হাতপাখার ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রের ভেতরে হাতপাখায় ভোট দিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। আরও অভিযোগ করা হয়, দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার ও ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
জোরপূর্বক নৌকায় ভোট দেওয়া হয়: ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণাফুলিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারী ভোটারদের ফিঙারপ্রিন্ট নিয়ে নৌকায় জোরপূর্বক ভোট দিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী। স্থানীয় কাউন্সিলের মেয়ে এমন কাজ করছে জানিয়ে ওই প্রার্থী বলেন, বিষয়টি প্রিসাইডিং অফিসার ও ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয়েছে।
ইভিএম বিভ্রাট :
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী আব্দুল ওয়াহেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইভিএম অকেজো হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন হাতপাখার এজেন্টরা। যা প্রিসাইডিং অফিসার ও ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয়েছে।
হাতপাখার নারী কর্মীদের সেন্টারে প্রবেশে বাধা :
২২ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কেন্দ্রে হাতপাখার নারী কর্মীদের সেন্টারের কাছাকাছি ঘেঁষতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
হাতপাখার এজেন্টকে পিটিয়ে জখম :
নগরীর চৌয়মাথায় হাতেম আলী কলেজ রোড সাবেরা খাতুন বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে হাতপাখার মো. প্রিন্স নামের এক এজেন্টকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
হাতপাখা সমর্থক ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি : ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদর রোডে হাতপাখার সমর্থক ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মন্তব্য করুন